বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

আফতাব-পাঙাস আত্মগোপনে প্রকাশ্যে সেই ‘ভয়ঙ্কর’ পান্না লাল!

ভেজাল জায়গা কেনাবেঁচায় মধ্যস্থতা, জবর দখল করা তার মূল পেশা। কেউ অবাধ্য হলে কিংবা টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করতেও হাত কাঁপতো না তার। এ যাবত খুনসহ অগনিত হত্যা চেষ্টা মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি হলেন পান্না লাল চৌধুরী। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর আফতাব চৌধুরীর সবচেয়ে ঘনিষ্ট সহচর। হত্যাসহ ডজনের বেশি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 


আফতাবের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত পীরমহল্লা, বনকলা পাড়াসহ সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায়। গত সিসিক নির্বাচনের সময় আফতাব হোসেন খান যখন প্রতিদ্বন্দ্বি কাউন্সিলরের বাড়িতে অস্ত্রের মহড়া দেন। ওই মহড়ায় ছিলেন পান্না লালও।


সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের আরেক সহযোগী পাঙ্গাস। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদে পীর মহল্লায় জামায়াত নেতার বাসায় অগ্নিসংযোগে আলোচনায় আসে আলমগীর হত্যার আসামি পাঙ্গাসের নাম। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পান্না লালও জড়িন ছিলেন জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আফতাবের অপরাধ সম্রাজ ভিত্তি গড়ার দুই হাতিয়ার ছিলেন পান্না লাল ও পাঙ্গাস। তাদের দাপটে তটস্থ ছিলেন এলাকাবাসী।    


গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আফতাব, পাঙ্গাসরা পালিয়ে যান। তবে ছদ্ববরণে এলাকায় এখনো বিরাজমান পান্না লাল চৌধুরী। অবশ্য তিনি এখন রূপ বদলেছেন। আশ্রয় নিয়েছেন বিএনপির আলোচিত নেতা কালা জামালের ছায়াতলে।
অপরাধ ঢাকতে এবং নিজেকে আড়াল করতে ধর্মান্তরিত হয়ে আব্দুর রহমান নাম রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতা পান্না লাল চৌধুরী (৫২)। যে কারণে প্রকাশ্যে থাকলেও যেনো তাকে খোঁজে পায় না পুলিশ!


আওয়ামী লীগ নেতা ও সদর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি এবং মহানগর ছাত্রলীগের সিনিয়র সদস্য ছিলেন পান্না লাল চৌধুরী। লোকে তাকে ‘পান্না দা’ বলে ডাকতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে তার যন্ত্রণায় অতিষ্ট ছিলেন মানুষজন। হত্যা, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ভূমি জাল-জালিয়াতি-এমন কোনো অপরাধ নেই তিনি করেননি।


এয়ারপোর্ট থানায় হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মামলার আসামি পান্না লাল চৌধুরী ওরফে আব্দুর রহমান (৫২)। তিনি মৃত কামদা রঞ্চন চৌধুরী, বনকলাপাড়া ১২৭/১-এ নুরানী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। ভোটার আইডির তথ্যমতে তিনি পীরমহল্লা ঐক্যতান ১৪১/৪ বাসার বাসিন্দা। এলাকায় খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  আফতাব হোসেন খানকে মানুষ যতটা না ভয় পেতো, তার চেয়ে বেশি ভয় পেতো পান্না লাল চৌধুরী ও পাঙ্গাসকে।  ভূমি দস্যুতায় পান্না লাল ছিলেন সিদ্ধহস্ত। জায়গা কেনা বেচায় মানুষকে ব্লাকমেইলিং করতেন। কেউ ভবন নির্মাণ করতে গেলেও টাকা দিতে হতো। ভেজাল ভূমি কেনাবেচা নতুন বিক্রিত জায়গা ১২৯ নং বাসা। পট পরিবর্তনের পর প্রবাসীর জায়গাটি দখলে নিয়ে বিক্রি করে। মনির নামে এক ব্যক্তির কাছে জাল দলিল সৃজন করে বাগানের জায়গা বিক্রি করে। তাকে ২১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরে দেখতে পান ভূমির প্রকৃত মালিক বাগান।


পান্না লালের বিরুদ্ধে যত মামলা: ২০১৯ সালের ১২ জুন রাত পৌনে ১১টার দিকে বনকলাপাড়া বাজার পয়েন্টে ব্যবসায়ী দুদু খানকে কুপিয়ে করে সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় পরদিন ১৩ জুন নিহতের ভাই জুয়েল খান বাদি হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহারনামীয় ২ নং আসামি পান্না লাল ওরফে আব্দুর রহমান। ওই মামলাটি ২৫ লাখ টাকায় আপোষে রফার জন্য বাদিকে প্রস্তাব দিয়েছেন পান্না লাল।


২০২১ সালের ৬ আগস্ট বনকলাপাড়ার মো. শাহজাহান আলী বাদি হয়ে পান্না লালকে প্রধান আসামি করে এয়ারপোর্ট থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা (নং-৮(০৮)’২১) দায়ের করেন। একই বছরের ২৫ জুন সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার বৃদ্ধা সাহেনা বেগম বাদি হয়ে থানায় আরেকটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার ৯নং আসামি পান্না লাল। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বনকলা পাড়া নূরানী ১০৫/১০ বাসার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা নেত্রকোনার খুলিয়াজুরি এলাকার সফিক মিয়ার স্ত্রী মোছা. রাবিয়া বেগম বাদি হয়ে  আরেকটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহারনামীয় ৫ নং আসামি পান্না লাল। এছাড়া বনকলা পাড়া নুরানী ১০৫/১১ বাসার শাহ আলম আলী বাদি হয়ে ২০২১ সালের ২৪ জুন এয়ারপোর্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এর প্রেক্ষিতে আদালতে দায়েরকৃত প্রসিকিউশনে একমাত্র পান্না লালকে অভিযুক্ত করা হয়। 


এছাড়া আরো ৪টি মামামারি হত্যা চেষ্টা মামলা রয়েছে। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর একই থানায় আরেকটি হত্যা চেষ্টা মামলা হয়। যার নং-৯(৯)’২১)। ২৫ নভেম্বর  একই থানায় দায়েরকৃত মামলা (নং-২৮(৯)’১৯ হত্যা চেষ্টা মামলা। ২০২১ সালের ৩ আগস্ট এয়ারপোর্ট থানায় হত্যাচেষ্টার আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। একই বছরের ৬ আগস্ট এয়ারপোর্ট থানায় মামলা (নং-৮(৮) ’২১ দায়ের করা হয়। পান্না লালের আপন ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা গৌরব লাল আলোচিত রাজু হত্যার ১নং আসামি।


পান্না লাল চৌধুরী ওরফে আব্দুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলকভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। একাধিক মামলার রায়ও পেয়েছি। মূলত; জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মামলা দেওয়া হয়।

এই সম্পর্কিত আরো