জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ কোন রাজতন্ত্রের দেশ নয়। অথচ বাংলাদেশে দেড় যুগে যা হয়েছে, রাজতন্ত্রের দেশেও তা হয়নি। এই কষ্ট মানুষ বুকে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো। রাষ্ট্র বিজ্ঞানে একটা কথা আছে, যারা স্বৈরাচারি হয়ে যায়, তারা পতনের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু একটা ছিদ্র খোলা রাখে। যেটা দিয়ে তার পতন হয়। সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে সববিভাগকে ঠিক সেইভাবেই সাজিয়েছিলো। ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু সরকার ভাবেনি এই পচা শামুকে তাদের পা কাটবে। আবু সাঈদের মৃত্যু শুধু দেশ নয়, গোটা দুনিয়া নড়ে উঠলো। আন্দোলন নতুন বেগ পেলো।
(০৮ জুন) দুপুর ১২টায় কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে পেশাজীবি প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াতের আমীর।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা খুব ভালো একটা নির্বাচন চাই। আমরা আশা করব, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা কেউ করবেন না। তাহলে শহীদদের রক্তের প্রতি আমরা ইমানদারি রক্ষা করতে পারব না। শহীদদের রক্তের প্রবঞ্চনা হবে, এমন নির্বাচন আমরা চাই না। সুন্দর, সুষ্ঠু একটা নির্বাচন চাই আমরা।’
তিনি বলেন, এ দেশে আয়নাঘর নামে টর্চার সেল করা হয়েছিল। ইতালিতে মুসোলিনি এটা করেছিল। বাংলাদেশে এর ছায়া কায়েম করেছিল গত সরকার। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছিল। আজ পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর (বিএনপির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য) পরিবার জানে না তিনি জীবিত আছেন কি না। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আয়নাঘরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। কেন একটা স্বাধীন দেশে এটা হবে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য বলতে হবে।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাকে তিনবার দীর্ঘ সময় জেলে রাখা হয়েছে। সাড়ে ১৬ বছর আমাকে আপনাদের সামনে আসতে দেওয়া হয়নি। এ সময়ের মধ্যে অনেকেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের সামনে উপস্থিত হতে পারলে ভালো হতো। আমি জেলে অনেক মানুষ দেখেছি, কেউ ৩ মাস, কেউ ৭ মাস থেকে জেল হাজতে। পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারেনি। পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বলে এরা নন এন্ট্রি। এদেরকে আমরা ধরেছি কিন্তু আমরা স্বীকার করিনা। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সুপ্রিম কোর্টেও বিচারককে ৮ বছর এভাবে রেখেছিলো। এভাবে মানুষকে গুম করেছে।এই তালিকায় আমাদের সিলেটের ইলিয়াছ আলীর নাম রয়েছে। তার পরিবার জানে না। তিনি কোথায় আছে, জীবিত আছে নাকি মারা গেছে। ভয় আর নিপীড়নের মধ্যে মানুষ কথা বলার সাহস হারিয়েছে। অথচ সেই সময়ও বলা হতো, দেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, মানুষকে সাজানো মামলায় ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। আমাদের রিমান্ডে নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হতো। আমরা তখন বলেছি- আমাদের স্বপ্ন মানবিক বাংলাদেশ।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এ দেশে আয়নাঘর নামে টর্চার সেল করা হয়েছিল। ইতালিতে মুসোলিনি এটা করেছিল। বাংলাদেশে এর ছায়া কায়েম করেছিল গত সরকার। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছিল। আজ পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর (বিএনপির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য) পরিবার জানে না তিনি জীবিত আছেন কি না। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আয়নাঘরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। কেন একটা স্বাধীন দেশে এটা হবে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য বলতে হবে।’
এর আগে ৬ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ নেতৃত্ব ক্ষমতায় এলে পাঁচ বছরেই দেশ বদলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমি সাধারণ একজন মানুষ। ন্যায়বিচারের দাবি যার, সে-ই ন্যায়ের পক্ষে ভাবে। যদি সৎ নেতৃত্ব আসে, তবে পাঁচ বছরেই দেশ বদলে যাবে। আল্লাহ যেন দেশকে এমন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেন, যিনি ন্যায়ের ওপর অটল থাকবেন।
তিনশো আসনে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব সারা বাংলাদেশে ইনশা আল্লাহ, ৩০০ আসনে। আমি সেসব প্রার্থীর জন্য সারা দেশে ঘুরব, যাঁরা সত্যিকার অর্থে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করবে। তাঁরা ইসলামি জনতা হবেন, দেশপ্রেমী জনতা হবেন। আমরা তাদের সঙ্গেই থাকবো।
তিনি আরও বলেন, ৩১ তারিখ তারা চেয়েছিলো, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে, কিন্তু পরের দিন ১ আগষ্ট সেটা করলো। আমরা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলাম। আমাদের প্রতীক কেড়ে নেয়া হলো। সেই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে শুধু আমরা নয় জাতীয়তাবাদী শক্তি ছিলো। আরও অনেকে ছিলো। সবার যুগোপৎ আন্দোলনে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়লো।
তিনি আরো বলেন, অনেক মানুষ স্বার্থপর দাবি নিয়ে আমার কাছে আসতে পারে। আমি না করি না, আমি বলতাম হ্যাঁ আমি বলে দেবো। আমিতো যার কাছে বলার তার কাছে বলি। কিছুদিন পর আবার দেখা যায় ফুল ও মিষ্টি হাতে তারা আসেন। ওই আমি যে বলেছিলাম, আমার বলায় চাকরি হয়েছে। আমি যে কার কাছে বলেছি, সেটা তারা জানেই না। ন্যায় বিচারের দাবি হলো যার পাওনা সে যেন পায়। আমি যে তদবির করবো, আমার তদবিরে যদি একজন যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষের হক নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কাল কিয়ামতের দিন আমি কি জবাব দেবো। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
উপজেলা জামায়াতের আমির সহকারী অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির মো. ফখরুল ইসলাম, ঢাকার পল্টন থানা জামায়াত আমির শাহীন আহমেদ খান, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মো. ইয়ামির আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, শ্রীপুর জালালিয়া দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শামসুল হক, সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাঈদ এনাম, প্রিন্সিপাল আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সিনিয়র শিক্ষক মনির উদ্দিন চৌধুরী, কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির দপ্তর সম্পাদক এনামুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ঈদের দিন শনিবার (০৭ জুন) সন্ধ্যায় কুলাউড়া পৌরসভা হলরুমে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।