সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়ায় ন১০ থেকে ১২টি চা-শ্রমিক পরিবারের জায়াগা দখলের অপচেষ্টায় অভিযোগ উঠেছে একটি ভূমিখেকো চক্রের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ০২ জুন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে খামিদপাড়া ২ নম্বর রোডের বাসিন্দা শেফু বক্সের ছেলে আবদুল খালিক বক্সকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৪২ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন চা-শ্রমিক প্রদীপ ব্যানার্জী (৪১)।
প্রদীপ বুনাজী সিলেট মহানগরীর শাহপরাণ থানাধীন চামেলীবাগ রোড নং-২ এর গোয়ালগাঁওয়ের বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন শাহপরাণ এলাকার মোহাম্মদপুরের রশিদ মিয়ার ছেলে খোকন আহমদ একই এলকার শহিদ মিয়া (৫০), জাহানপুরের হাতিম আলীর ছেলে মাসুক পীর (৪৫), খামিপাড়া রোড নং-২ এর মৃত ঈদ্রিসের ছেলে সিরাজ মিয়া (৬০) একই এলকার হান্দু মিয়ার ছেলে জয়নাল মিয়া (৪০), শাহপরাণ এলাকার মোহাম্মদপুরের রশিদের ছেলে রোকন মিয়া (৪৫)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সিলেট মহানগরীর খাদিমপাড়া এলাকায় ‘দিনকছিল ডেটিভ টি এন্ড লেন্ডস কোম্পানী লিমিটেড’র নালিশা ভূমিতে চা-শ্রমিক প্রদীপ ব্যানার্জীর (৪১) পূর্ব পুরুষরা ৬০ বছর ধরে কাজ করছেন। সেই সুবাদে টি কোম্পানী চা- শ্রমিকদের পরিবার পরিজন নিয়ে বসাবস করার জন্য ১০-১২টি পরিবার শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস ও ভোগ দখল করে আসছেন। চা-শ্রমিকরা দীর্ঘকাল থেকে সেখানে ১ একর জমিতে শ্মশানঘাট নির্মাণ করে তাদের আত্মীয় স্বজনদের সৎকার করে আসছে। তাছাড়া চা শ্রমিকরা নালিশা ভূমিতে বসতঘর বিদ্যুৎ সংযোগ, হোলিন্ডং ট্যাক্স প্রদান করে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে আসছেন। চা শ্রমিকদের পূর্ব পুরুষ রাজ কুমার গোয়ালা ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নালিশা ভূমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে ডিসিআর প্রাপ্ত হন। সম্প্রতি ভূমিখেকো চক্র সন্ত্রাসী আবদুল খালিক বক্সদের কুনজর পড়ে চা শ্রমিকদের বসবাসকৃত বাড়িঘর ও পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া জমির উপর। পাশাপাশি চা-শ্রমিকদের উচ্ছেদ করতে আবদুল খালিক বক্স ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী পাঁয়তারা চালিয়ে আসছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ মে সকাল ১০টায় ভূমিখেকো সন্ত্রাসী আবদুল খালিক বক্স ও তার বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চা-শ্রমিকদের তাঁদের পূর্বপুরুষদের বসবাস করা জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে বাড়িঘর ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাট চালায়। এসময় চা-শ্রমিকরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে এলাকার লোকজনের ধাওয়ায় সন্ত্রাসী আবদুল খালিক বক্স ও তার বাহিনী পালিয়ে যায়। যাওয়ার পূর্বে চা-শ্রমিক প্রদীপ ব্যানার্জীসহ অন্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে বলে যায় তারা আবারও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে জায়গা দখল করতে ফিরে আসবে। তখন চা-শ্রমিকরাও এর প্রতিবাদ করেন এবং তার সন্ত্রাসীদের বলেন পূর্বপুরুষদের ভিটে ও তাদের বসবাসের ভূমি রক্ষায় তারাও প্রাণ দিতে প্রস্তুত আছেন।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, এমন পরিস্থিতিতে চা-শ্রমিক প্রদীপ ব্যানার্জী ও তাদের সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীরা বর্তমানে ভূমিখেকো সন্ত্রাসী আবদুল খালিক বক্স ও তার বাহিনীর সাথে যেকোনও সময় সংঘর্ষের আশক্সক্ষা করছেন। এমতাবস্থায় চা-শ্রমিকরা তাদের মালিকানাধীন দখলীয় ভূমি যাতে ভূমিখোকো সন্ত্রাসী চক্র দখল করতে না পারে সেজন্য আদালতে কাছে আবদুল খালিক বক্সদের বিরুদ্ধে ফৌজধারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় প্রসেডিং করা দরকার বলে জানান। অন্যথায় চা-শ্রমিক প্রদীপ ব্যানার্জী ও স্বাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন।
মামলার বাদী চা-শ্রমিক প্রদীপ ব্যানার্জী জানান, আমরা চা-শ্রমিকরা যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে এখানে বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি খাদিমপাড়ার খালিক বক্সসহ একদল সন্ত্রাসী আমাদের ভিটে মাটি ছাড়া করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছাড়া করতে চায়। আমরা আমাদের ভিটেমাটি রেখে কোথাও যাবে না এতে আমরা মরতে রাজি। তিনি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসে প্রতি আহ্বান জানাই আমরা খেটে খাওয়া চা-শ্রমিকরা জাতে উপযুক্ত বিচার পাই।
এ ব্যাপারে মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুক্কুর আলী জানান, আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত সংশ্লিষ্ট থানাকে এই ব্যাপারে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে শাহপারণ (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, থানায় এখনো পর্যন্ত আদালতে দায়ের করা মামলার কাগজ আসেনি।
উল্লেখ্য এর আগে, আবদুল খালিক বক্সের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়া ২নং রোডে ‘রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ’ করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠে। তার কথামতো চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ কারায় এখানো ৭ পরিবারের লোকজন জিম্মি হয়ে আছেন।
সেই ঘটনায় ভোক্তভুগী পরিবারগুলোর হয়ে জামাল আহমদ কামাল আবদুল খালিক বক্সসহ ৪/৫জনকে অভিযুক্ত করে সিলেটের জেলা প্রশাসক, র্যাব-৯ এর অধিনায়ক, জেলা স্টেডিয়ামের আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার, সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী অফিসার ও উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বরাবরে অভিযোগ প্রদান করেন। তবে অভিযোগ ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।