বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫
বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

বার্ধক্যের ভার সইতে পারছেনা জামালগঞ্জের তেরানগর ব্রীজ

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের প্রায় ২২ বছরের ঝুকিপূর্ণ তেরানগর দৌলতা নদীর ব্রীজ দিয়ে পার হচ্ছে অটো রিক্সা, সিএনজি, মটর সাইকেল, ট্রলি সহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। 

স্থানীয়রা বলছেন ২২ বছরের পুরানো ব্রীজটি আর সইতে পারছেনা তার বাধ্যক্যের ভার। নতুন সেতু নির্মানের এলাকাবাসীর দাবীর বারবার আশ্মাস মিললেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি বছরের পর বছর। যার কারনে এলাকার মানুষ জনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। 

জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের দোলতা নদীর উপর ৯৫ মিটার তেরানগর ব্রীজ দিয়ে পাড় হতে হয় ৩৫টি গ্রামের একমাত্র ভরসার এই ব্রীজটি। যা না হলে ফেনারবাক ইউনিয়নের এই সব গ্রামের সাথে যোগাযোগের হেমন্তে আর কোন উপায় নেই। 

২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০০৪ সালে নির্মিত হয় এই ব্রীজটি। তখন কোন যান বাহন না চলার কারনে একমাত্র এই ব্রীজটি দিয়ে পায়ে হেটে যেতেন ৩৫টি গ্রামের লোকজন। তৎকালীন সংসদ সদস্য কমরেড নজীর হোসেন উপজেলার গ্রামীন অবকাটামোর আওতায় জামালগঞ্জে ৫টি ফ্রোড ব্রীজ নির্মান করেন। একটি সাচনা বেহেলী রোডে চৌধুরী বাড়ীর পার্শে, সাচনা পলক গ্রামের সংযুগ পূর্ণ পিয়াইন নদীতে, তেরা নগর দোলতা নদীর উপর তেরানগর ব্রীজ, দৌলতপুর বীনাজুরার কানাইখালী নদীর উপর ১টি ব্রীজ নির্মান করেন। 

এই ব্রীজ দিয়ে প্রতিদিন ৩৫টি গ্রামের হাজার হাজার লোক যাতায়াত করতো। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় জামালগঞ্জ হয়ে তেরানগর ব্রীজ পার হয়ে ফেনারবাক ইউনিয়নের লক্ষীপুর বাজার, নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরন হওয়ায় যান্ত্রীকতার ছোয়ায় প্রতিদিন শত শত মোটর সাইকেল অটোরিক্সা, সিএনজি, মিনিট্রাক, ধান টানার ট্রলি এই ব্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্রীজ দিয়ে জামালগঞ্জ উপজেলার সাথে নয়মৌজা সহ দিরাই উপজেলার ৩৫টি গ্রাম ১টি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২টি বাজার, ১টি মাদ্রাসা এবং প্রায় অর্ধশত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই ব্রীজটি। এছাড়াও মাতারগাও, রাজাপুর রসুলপুর লালপুর দৌলতপুর, উজান দৌলত পুর, রাজাবাজ, খোজার গাও, বীনাজুরা তেঘরিয়া গঙ্গাধরপুর, ছয়হারা, কামারগাও, ইনাত নগর, বিজয় নগর, কাশীপুর, উদয়পুর লক্ষীপুর ভেদারপুর ফেনারবাক, চাটনি পাড়া, নাজিমনগর হটামারা, উদয়পুর ছাড়াও দিরাই, ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটি পাড়া, নূরনগর, আলী নগর, ইসলামপুর,  সেচনী, রফীনগর ইউনিয়নের খাগাউরা, সেচনী, কিত্তাগাও, স্বজনপুর, সহ ১২টি গ্রামের মানুষ তাদের জমিজমা পাকনার হাওরে থাকায় তারাও ভুমি খাজনা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই ব্রীজ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। 

এই ব্রীজটি যেহেতু পায়ে হাটার জন্য গ্রামীন জনপদ অবকাটামের আওতায় ফোডব্রীজ করা হয়েছিল। প্রায় দুই দশক যাবত এই ব্রীজ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভারী যানবাহন মালামাল সহ পরিবহনের কারনে তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। কোন গাড়ী এই ব্রীজের উপর উঠলে ব্রীজটি কাপতে থাকে। প্রতি বছরই উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্ধ থেকে সংস্কার করা হলেও তা কিছু দিনের মধ্যেই আবার খানাখন্দ সহ ব্রীজের রেলিং এপ্রোজ ভেঙ্গে যায়। যার কারনে ২০১৪ সালে দোলতা নদীর উপর এই ব্রীজটি জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) হতে এই ব্রীজটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করে সাইনবোর্ড টানানো হলেও আজও অবদি এই ব্রীজটি দিয়েই জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে শত শত যানবাহন। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ব্রীজের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট গর্ত এবং খানাখন্দে ভরা। মাঝে মাঝে কিছু গর্ত ইট বালু দিয়ে জোড়াতালী দেওয়া হলেও বাকী গর্তগুলির উপর দিয়েই প্রতিদিন চলছে শত শত যান বাহন। 

এই ব্রীজ দিয়ে চলাচলকারী অটোরিক্সা চালক  শামীম আহমদ বলেন, প্রতিদিন ব্রীজের গর্তে পরে কোন না কোন গাড়ী নষ্ট হচ্ছে। ব্রীজে গাড়ী উটলেই ব্রীজটি কাপতে থাকে। মনে হয় হেলে পড়ে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ধান এবং মাড়া কাটার ট্রলি বীজের উপর দিয়ে আশা যাওয়া করার কারনে ব্রীজটি আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্রীজের পাকা রেলিং গাড়ীর ঢাক্কায় ভেঙ্গে আরো ঝুকিতে ফেলেছে। সংকীর্ণ এই ব্রীজ দিয়ে দুটি গাড়ী একমাসে দুই দিকে চলাচল করতে পারেনা। 

জামালগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক অঞ্জন পুরকায়স্ত বলেন, দোলতা নদীর উপর তেরানগর ব্রীজটি ফেনারবাক ইউনিয়নের হেমন্তে ৩৫টি গ্রামের মানুষের একমাত্র মাধ্যম। এই ব্রীজ দিয়ে পার হচ্ছে প্রতিদিন শত শত অটো, সিএনজি, ধান কাটার ট্রলি মোটর সাইকেল। ব্রীজটি ২০১৪ সালে পরিত্যক্ত করার পরও আর কোন ব্যবস্থা না থাকায় এই ব্রীজ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এই ব্রীজে ২০১৪ সাল থেকে দুর্ঘটনা মৃত্যু বরণ করেছে ৩জন, আহত হয়েছে ২ শতাধিক ছাগল ভেড়া গবাদী পশু মারা গেছে অর্ধশত। ভোগান্তি আর হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষ। দেশে এতো উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু জনগুরুত্ব পূর্ণ পুরাতন এই ব্রীজটি করার জন বিভিন্ন মন্ত্রি সাংসদ আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। ৩৫টি গ্রামের জনদুর্ভোগের কথা চিন্তাকরে দোলতা নদীর উপর একটি ব্রীজ করা হোক। 

ব্রীজটির জীর্ন দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত চন্দ্র সরকার বলেন এই ব্রীজে প্রায়ই গাড়ী নষ্ট সহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে কেউ খবর রাখছেনা। এই ব্রীজ ভেঙ্গে যদি কোন বড় ধরনের দুর্ঘটনা হয় এ দায় কে বহন করবে। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই ঝুকিপূর্ণ ব্রীজ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্তমান সরকারের কাছে জোরদাবী জানাচ্ছি দ্রুত দৌলতা নদীর উপর নতুন একটি ব্রীজ করার জন্য। 

ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো: আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, এই ব্রীজ দিয়ে ৪০টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। এই ব্রীজটি দীর্ঘদিন যাবত ঝুকিপুর্ণ থাকায় জনগন ও যানবাহনের ভোগান্তি হচ্ছে। ব্রীজটি ২০১৪সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনার পরও প্রতিদিন শতশত যানবাহন ব্রীজ দিয়ে চলাচল করছে। যার কারনে যেকোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি এই ব্রীজটি অপসারন করে নতুন ১টি ব্রীজ নির্মাণ করার জন্য। 

জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো: ছানোয়ার হোসেন জানান, দৌলতা নদীর উপর তেরানগর ব্রীজটি ২০০২সালে শুধু মাত্র জনগনের চলাচলের জন্য করা হয়েছিল। তখন এই উপজেলার কোন গাড়ী ঘোড়ার যোগাযোগ ছিলনা। যার কারনে দোলতা নদীতে মানুষের চলাচলের জন্য ফোডব্রীজ করা হয়েছিল। বর্তমানে জনগনের চাহিদায় কারনে এই ব্রীজ দিয়ে প্রতি-নিয়ত শত শত গাড়ী চলাচল করছে। যার কারনে এই ব্রীজটি এখন ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়। তবে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে আমরা হেমলিট প্রকল্পের আওতায় দোলতা নদীর ব্রীজ সহ এই সংস্থার মাধ্যমে আগামী অর্থ বছরের জন্য আরো কয়েকটি ব্রীজের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি আগামী অর্থ বছরে অর্থ বরাদ্ধ হলে এই এলাকার জনসাধারনের অতিগুরুত্তপূর্ণ এই ব্রীজটি নতুন করে করা হবে।  

এই সম্পর্কিত আরো