শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
শিবিরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে জামায়াত আমির - যুবকদের বেকার ভাতা নয়, তাদের হাতে কাজ তুলে দিতে চাই সেদিন তারেক রহমানের সঙ্গে মান্নার কী কথা হয়েছিল, জানালেন স্ত্রী তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি - যুক্তরাষ্ট্রের ১০ ব্যক্তি ও ২০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ গুলিস্তানের খদ্দর মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে তাহিরপুর সীমান্তে ২৪টি শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধার শান্ত-মুশফিক জুটির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সিলেটকে হারাল রাজশাহী: বিপিএল নাজিব রাজাক দুর্নীতির আরেক মামলায় দোষী সাব্যস্ত আবারও তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান শীতের সবজিতে কাঁচাবাজারে স্বস্তি বিয়ে সুন্নত নাকি ফরজ?
advertisement
সিলেট বিভাগ

মহাসড়কের গরুর হাট, জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা!

হাইকোর্টের রুলনিশির ও প্রশাসনের জটিলতার ম্যারপেচে চলছে বাজার

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পাশেই নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের জনতার বাজার গরুর হাট জমে উঠেছে। এই হাটে  প্রতি শনিবার নিয়মিতভাবে বসছে বিশাল পশুর হাট। প্রতি হাটে ২০/২৫ হাজার গরু উঠছে, বিক্রি হচ্ছে ৮/১০ হাজার গরু।নির্ধারিত জায়গায় গরু জায়গা সংকুলান না হওয়াতে অতিরিক্ত গরু রাখা হয়। প্রায় ১০ একর জায়গা নিয়ে গরুর হাটটি বসে। ৫০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন বাজারে আইন শৃংখলার রক্ষার জন্য। তাদেরকে জন প্রতি দুই হাজার টাকা দেয়া প্রতি বাজারে ও নেতা কর্মীর চা নাস্তা বাবত ২০/২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয় বলে জানান বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

প্রতি হাটে ৫/১০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। বাজার কমিটি বলছে গত বছর ৯১ লাখ টাকা কালেকশন করে সরকারী ফান্ডে জমা করা হয়েছে।বর্তমানে কালেকশনের টাকা স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে অতিরিক্ত টাকা স্থানীয় মসজিদের ফান্ডে জমা হচ্ছে বলে জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার জানুয়ারি থেকে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারীভাবে কোন কালেকশন করেননি। বর্তমান বাজার কমিটি কালেকশন করে তারা তাদের মতো ব্যয় করছেন। হাইকোটের রিট ও রুলের কপি ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৌছেছে বলে জানান। জনতার বাজারে কে টাকা সেটা জানেনা উপজেলা নির্বাহী অফিস।

এনিয়ে এলাকায় নানা রকম ধুম্রজাল রয়েছে।হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাটটি নিয়ে একটি পরিস্কার নির্দেশনা আসা দরকার মনে করেন সচেতন মহল।


সম্প্রতি মহাসড়কের পাশে এই পশুর হাট না বসানোর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে সেটির বিরুদ্ধে বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ হাইকোর্টে  রিট করেন এর আদালত হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নিষেধাঙ্গা স্থগিত করে রোল জারি করে কেন বাজার স্থগিতের আদেশ দেয়া হলো ব্যাখ্যা করার জন্য। এই রিট দায়েরর পর থেকে বাজারে কালেকশনের কোন কাজে প্রশাসন অংশ নিচ্ছে না।

আইনের মারপ্যাচে এই হাট বন্ধ হয়নি, জনতার বাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে কোটি টাকার বাণিজ্য। ‘প্রত্যায়ন’ নামে বিক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই। অভিযোগ রয়েছে, এই অবৈধ কার্যক্রমের পেছনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াতের প্রভাবশালী একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। দিনার পুর এলাকার তিনটি ইউনিয়নের লোকজন কে দিয়ে বাজার পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির মধ্যে সব দলের মানুষ রয়েছে।

সুত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান ৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জনতার বাজার পশুর হাট অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। এরপর ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে হাট পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, কেউ যদি সরকারি অনুমতি ছাড়া হাট পরিচালনা করে বা সহযোগিতা করে, তবে তা হাট-বাজার আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। তবে বাস্তবে এই নির্দেশনাগুলো কার্যকর হয়নি। 

এর নেপথ্যে রয়েছে হাইকোটের রুল নিশি নিয়ে জটিলতা। প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা ও নীরবতার সুযোগ নিয়ে জনতার বাজার পরিচালনা কমিটি গত ৫ মাসে অন্তত ১৭ বার পশুর হাট বসিয়েছে। এই গরুর হাটটি একদম মহাসড়কের পাশে হওয়ার সারাদেশে হাকডাক রয়েছে। প্রতি বাজারে ২০/২৫ হাজার গরু এখানে আসে। সারাদেশের গরু ব্যবসায়ীরা বাজারে গরু নিয়ে আসেন। একদিন আগেই বাজার জমে যায়। আগে সাপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও সোমবার বাজার বসলেও এখন সাপ্তাহে শুধু শনিবার বাজার বসে।

প্রত্যেকবারই গরু-ছাগল বিক্রয়ের সময় ‘প্রত্যয়ন’ নামে প্রতি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১,০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। প্রতি হাটে আদায় হচ্ছে আনুমানিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। 

অভিযোগ রয়েছে, এই হাট পরিচালনায় সরাসরি জড়িত রয়েছেন দিনারপুর জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সদ্য মনোনীত সভাপতি ও গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাপরাধের মামলায় জেলকাটা সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ, সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন বীর প্রতিক, বাজারের সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন কাজী তোফায়েল আহমদ, গজনাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিউল আলম বজলু, সহসভাপতি কাওছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের কায়েদ, গজনাইপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য জাহেদ আহমদ এবং নজরুল ইসলামসহ সংঘবদ্ধ একটি প্রভাবশালী মহল।  জেলা প্রশাসনের নিষেধাঙ্গা ও হাইকোটের রুলনিশি মারপ্যাচে হাট বসিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

নরসিংদী আসা পশু বিক্রেতারা রাহিম আলী বলেন, হাটে গরু বিক্রির সময় বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যায়ন বাবদ অর্থ আদায় করা হয়। এসব অর্থের কোনো রিসিট দেয়া হচ্ছে না। প্রদানকৃত প্রত্যয়ন গুলোর কোনো সরকারি ভিত্তি নেই। এতে করে আমরা  সাধারণ ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানা রকম প্রতারণার শিকার হচ্ছি।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, হাটটি যেহেতু অনুমোদনহীন, তাই কোনো প্রত্যয়নপত্র বা রশিদের সুযোগ নেই। অবৈধভাবে পরিচালিত হাট থেকে অর্থ আদায় সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রতারণামূলক। প্রশাসনের এত স্পষ্ট নির্দেশনার পরও হাট বসায় এবং অর্থ আদায়ে কোনো ধরনের বাধা না আসায় তারা প্রশাসনের নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নীরবতা এই অবৈধ বাণিজ্যক বাজারটি করতে  উৎসাহিত করছে।যদিও আইনের মারপ্যাচ রয়েছে তবুও প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিৎ।

 সব মিলিয়ে জনতার বাজার পশুর হাট এখন প্রশাসনিক জটিলতা ও হাইকোর্টের রুল নিশির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষায়। এখন এই বাজারটি রাজনৈতিক একটি মহলের কোটি টাকার  অর্থ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে। এর থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ প্রশাসনের পদক্ষেপ জরুরি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

জনতার বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক কাজী তোফায়েল আহমদ বলেন,জনতার বাজার এখন আমাদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। হাইকোর্টের রুল নিশি জারির পরে আমরা পরিচালনা করছি। এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিস খাস কালেকশন করতো। গতবছর তারা ৯১ লাখ টাকা সরকারী খোসাগারে জমা করেছে। এবার হাই কোর্টে আমি বাদী হয়ে তাদের উপর রুলনিশি জারির আবেদন করি। হাইকোর্ট জেলা প্রশাসনের নিষেধাঙ্গা স্থগিত করে রোল জারি করেছেন কেন নিষেধাঙ্গা দেয়া হলো জবাব দেয়ার জন্য। এছাড়া বাজার পরিচালনার জন্য ৫০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন বাজারে আইন শৃংখলার রক্ষার জন্য। তাদেরকে জন প্রতি দুই হাজার টাকা দেয়া প্রতি বাজারে ও নেতা কর্মীর চা নাস্তা বাবত ২০/২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বাজারের কালেকশন কত টাকা হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন লাখ দেড় লাখ টাকা আদায় হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে ও চা নাস্তা খেয়ে যে টাকা অতিরিক্ত থাকে সেটা মসজিদের ফান্ডে জমা করি। তিনি মসজিদের ফান্ডে জমার রিসিট দেখান।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে গত জানুয়ারি মাসে  জেলা প্রশাসক যখন নিষেধাঙ্গা দেন তখন থেকেই খাস কালেকশন করা হচ্ছে না। এরপরও কেউ যদি রশিদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে থাকে, তা আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ।” তিনি বলেন আমি হাইকোর্টের রুল নিশির একটি কাগজ পেয়েছি সেটি যথারিতি প্রক্রিয়া কাজ চলছে। এর ম্যারপেচে কে জনতার বাজার থেকে টাকা তুলছে সেটা আমরা জানিনা।

এই সম্পর্কিত আরো

শিবিরের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে জামায়াত আমির যুবকদের বেকার ভাতা নয়, তাদের হাতে কাজ তুলে দিতে চাই

সেদিন তারেক রহমানের সঙ্গে মান্নার কী কথা হয়েছিল, জানালেন স্ত্রী

তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রের ১০ ব্যক্তি ও ২০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর চীনের নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ

গুলিস্তানের খদ্দর মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে

তাহিরপুর সীমান্তে ২৪টি শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধার

শান্ত-মুশফিক জুটির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সিলেটকে হারাল রাজশাহী: বিপিএল

নাজিব রাজাক দুর্নীতির আরেক মামলায় দোষী সাব্যস্ত

আবারও তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান

শীতের সবজিতে কাঁচাবাজারে স্বস্তি

বিয়ে সুন্নত নাকি ফরজ?