রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

জামালগঞ্জ সুনামগঞ্জ সড়কে খানাখন্দে ভরা, যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ সড়কের নোয়াগাও বাজার পর্যন্ত ১১কিলোমিটার রাস্তাটি এখন জনসাধারনের জন্য মরনফাদে পরিনত হয়েছে। রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় প্রতিদিন দুর্ঘটনায় পড়েছে পথচারী ও সাধারন যানবাহন। এরাস্তা দিয়ে যান চলা চলতো দুরের কথা পায়ে হেটে যাওয়া ও কষ্টসাধ্য। তবু জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারো মানুষ। 

জেলার ধরমপাশা মধ্যনগর ও জামালগঞ্জ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের লোকজনের সুনামগঞ্জ সিলেট যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। এ রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় পন্য পরিবহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 


এলাকাবাসীর দাবীর মুখে জনপ্রতিনিধিদের বারবার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি এই সড়কটিতে। বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকা বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তার দুপাশ ভেঙ্গে যাওয়া সহ বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে সবসময় ছোট বড় দুর্ঘটনার ভয়ে যাত্রীরা নেমে হেটে যেতে হচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় কোন কাজ না হওয়ায় বর্তমানে স্থানে স্থানে ভেঙ্গে এতো বেশী পরিমান গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যে গাড়ীর বডি রাস্তায় লেগে গাড়ীর ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষকে উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলা ও সিলেট বিভাগীয় শহরের সাথে যাতায়াত করতে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এরাস্তা দিয়ে বিশেষ করে গর্ভবর্তী নারী, অসুস্থ ও বয়স্ক লোকজনের যাতায়াতের অধিক ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এমন কি উপজেলা প্রশাসন থানা পুলিশ ও সরকারী এম্বোলেন্স রাস্তার খানাখন্দের কারনে সুরমা নদীর ওই পাড় সাচনা বাজার দিয়ে যেতে হচ্ছে। যার কারনে বিভিন্ন প্রশাসনের গাড়ী ও এম্বোলেন্সটি সাচনা বাজার অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার জানান প্রতিদিন নোয়াগাও থেকে এই সড়ক দিয়ে কলেজে আসা যাওয়া করতে হয়। আটোতে উঠলে ঝাকুনির কারনে ভয়ে কাপুনি উটে যায়। কখন জানি অটো উল্টে যায়। রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বার বার বলার পরও কোন উদ্দোগ নেওয়া হয়নি।

নোয়াগাও বাজার থেকে আসা জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী আব্দুস সালাম বলেন, জামালগঞ্জ থেকে নেয়াগাও পর্যন্ত রাস্তাটি খানখন্দের কারনে প্রায়ই দুর্ঘটনা গটে । আমরা অটোতে উঠলে ভয়ে আতঙ্কে থাকি কখন যানি অটো উল্টে যায়। অনেক সময় খানখন্দের পানিতে স্কুল ড্রেস নষ্ট হয়ে যায়। এই রাস্তায় খানখন্দের কারনে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এম্বোলেন্স এমনকি জামালগঞ্জ থানার পিকআপ গাড়ীটি নদীর ওই পাড় সাচনা বাজারে পার করে নিয়ে যায়। উনারা যদি এই রাস্তায় চলাচল করতেন তাহলে বুঝতেন আমাদের কি দুর্গতি। তাই প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করার জন্য। 

সিএনজি চালক মকবুল হোসেন বলেন, আমি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে সিলেট আসা যাওয়া করি। রাস্তায় খানখন্দ ও বেহাল দশার কারনে যাত্রীরা সব সাচনা বাজার দিয়ে চলে যায়। যদিও দুইএকজন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করি, রাস্তায় খানাখন্দের কারনে প্রতিদিনই গাড়ী মেরামত করতে হয়। 


নোয়াগাও বাজার বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম কাপ্তান বলেন, আমরা উপজেলা বাসীর তথা নোয়াগাও বাজার বাসী রাস্তার বেহাল দশার কারনে প্রতিনিয়তই আকশ্মিক ভাবে যখন তখন যান চলাচলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছি। গত কিছুদিন আগে রাস্তার বেহাল দশার কারনে নোয়াগাও বাজার হতে জামালগঞ্জ গামী একটি অটোরিক্সা জাল্লাবাজ গ্রামের শেষ পান্তে উল্টে একজন যাত্রী ঘটনা স্থলে মারাত্তক জখম হয়, হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। আমাদের নোয়াগাও বাজারে বেশ কয়েকটি গর্তে অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে থাকার কারনে বিভিন্ন প্রতিস্থানের শিক্ষার্থী ছোট ছোট শিশুরা ও তাদের অভিভাবক সহ পথচারীরা গাড়ী চলাচলের পানি ছিটকে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন, যা খুবই দু:খ জনক। আমরা জামালগঞ্জ বাসী বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি, আমাদের জামালগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ গামী রাস্তাটি দ্রুত মেরামত ও নোয়াগাও বাজারের অংশটি আরসিসি ঢালাইয়ের আওতায় নিয়ে মজবুত ও টেকসই রাস্তা করনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হউক। 

এব্যপারে ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যন আকতারুজ্জামান তালুকদার জানান, এই রাস্তাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। বারবার প্রশাসনকে অবহিত করার পরও কোন অদৃশ্য শক্তির কারনে বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা। ভীমখালী ইউনিউন বাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবী জানাচ্ছি দ্রুত সড়কটি সংস্কার করার জন্য। 

উপজেলা প্রকৌশলী মো: ছানোয়ার হুসেন জানান, জামালগঞ্জ সুনামগঞ্জ সড়কের ব্যপারে আমি ২০২৪ এর ডিসেম্বরে জামালগঞ্জ যোগদান করে পরের সপ্তাহে হেমলিপ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টার মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করি। বিগত ১৪ বছর যাবত সড়কটিতে কোন কাজ না হওয়ার কারনে খানখন্দ ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। যার জন্য জামালগঞ্জ বাসীর ব্যানারে মানব বন্দন হয়েছে। পরে আমি দ্রুততম সড়কটি সংস্কার করার জন্য প্রধান প্রকৌশলী সিলেট বিভাগ এবং তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিলেট অঞ্চল এবং নির্বাহী প্রকৌশলী সুনামগঞ্জকে দ্রুততম কাজটি করার জন্য অনুরোধ করি। 

সুনামগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব আনোয়ার হোসেন সাহেব ২৫ হাজার পিকেট রমজানের ঈদের পূর্ব মুহুর্তে এই রাস্তার জন্য বরাদ্দ দিলে আমরা কাজ করি। কিন্তু ৪ কি:মি: কাজ হলেও ৭ কি: মি: রাস্তা খানখন্দেই থেকে যায়। গত বুধবার সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করি। তিনি নোট করে নিয়েছেন এবং পরবর্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাষ দিয়েছেন।

এই সম্পর্কিত আরো