আত্নীয়তার সূত্রধরেই পরিচয়, প্রেম, অতঃপর বিয়ের প্রস্তাব। আর এই বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোই কাল হলো রাজু আহমদের। রমজান মাসের শেষ দিন ইফতারের পূর্বে স্থানীয় পীরেরবাজারে যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক তাকে তুলে নেয়া হয় প্রেমিকা সুমাইয়া আক্তারের বাড়িতে। সুমাইয়ার পিতা সুলতান আহমদ পাখির নেতৃত্বে ৫/৬ জন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালায় নির্যাতন। হাত- পাঁ ভেঙ্গে ফেলে ও বেধড়ক হাতুড়ি পিটুনিসহ শরীরের নানা অঙ্গ হানির লক্ষ্য পাশবিক নির্যাতন করে। প্রকাশ্যে তুলে নেওয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে রাজুর মা পরিজা বেগম (৪৫) ওই বাড়িতে গিয়ে বাঁধা দিলে তাকেও কিল ঘুষি মারা হয়। একপর্যায়ে নিরুপায় মা ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। ততক্ষণে সুলতান গংরা রাজুকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়।
মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বিলেরপাড় গ্রামে। ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও গুরুতর আহত রাজু আহমদ (২০) পুরোপুরি সুস্থ হননি। নির্যাতনের দিন রাতে গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে অবগত করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ব্যস্ত থাকার সুযোগে উল্টো তার উপর পর্নোগ্রাফি মামলা করেন সুলতান আহমদ পাখি। দ্রুত পুলিশ মামলাটি এফআইআর করে। নিরুপায় পরিজা বেগম ৬ই এপ্রিল মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমল আদালতে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে বিলেরপাড় গ্রামের সুলতান আহমদ পাখি, সুফিয়ান মিয়া, সুরমান মিয়া, বালিয়াটিলার আবুল মিয়া,কমলগঞ্জের জুগিবিলের হারুন মিয়াকে আসামি করা হয়। আদালত বিষয়টি মামলা আকারে রুজু করার জন্য কুলাউড়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন এবং ৪ই জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের সময়সীমা বেধে দেন।
আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, বিলেরপাড়ের সুলতান আহমদ পাখি ও ওমান প্রবাসী মনসুর মিয়ার স্ত্রী পরিজা বেগম সম্পর্কে চাচাতো ভাই- বোন। সেই সুবাদে তাদের মেয়ে-ছেলের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মন দেওয়া নেওয়ার একপর্যায়ে ছেলে পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবটি রাজুর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মেয়ের বাবা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পরিবারে মনোমানিল্য দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বসে মেয়ের সাথে যোগাযোগ না রাখতে ছেলেকে বারণ করা হয়। কিন্তু আকস্মিকভাবে রাজুকে তুলে নিয়ে পাশবিক নির্যাতনের বিষয়টি জনমনে ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিকটিম রাজু জানায় আমি সবকিছু মেনে নিয়েছি। মেয়েটার অন্যত্র বিয়েও হয়েছে। কিন্তু আমাকে পঙ্গু করেও ওরা থামেনি। মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেওয়ায় আমি বাড়িছাড়া।
পরিজা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে দেয়। থানায় মামলা করতে গেলে জানায় চিকিৎসা শেষে আসার জন্য। পরে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দারস্থ হয়েছি।
এব্যাপারে মেয়ের পিতা সুলতান আহমদ পাখির সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন, তারা উভয়ই আত্নীয়। ছেলেটি গুরুতর আহত হয়। জেনেছি এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ সালিসি বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় বৈঠক মুলতবি করা হয়।
কুলাউড়া থানার ওসি গোলাম আপছার বলেন, আহত হয়ে থানায় আসলে ছেলের মাকে বলেছিলাম মামলা দিতে। তারা চিকিৎসা নিতে গিয়ে আর আসেনি। তিনি মহামান্য আদালতে মামলা করেছেন আমরা সেটি এফআইআর করেছি। উভয় পক্ষের মামলা তদন্তনাধীন।