বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

আত্মনির্ভরশীল জাতিগঠনে প্রাথমিকের শিশুরা কাব স্কাউটে এগিয়ে

আত্মনির্ভরশীল জাতিগঠনে কাব স্কাউট আন্দোলন একটি প্রশংসনীয় কার্যক্রম। প্রাথমিকের কোমলমতি শিশুরা কাব স্কাউট আন্দোলনে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে।  এটি বিশ্বব্যাপী একটি জনপিপ্রয় স্বেচ্ছাসেবী ও গতিশীল অরাজনৈতিক আন্দোলন। এটি একটি সামাজিক শিক্ষামূলক কার্যক্রম যা বয়স্ক নেতাদের সমর্থনে পরিবেশিত হয়ে আসছে। শিশু-কিশোর ও যুববয়সীদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সৎ, চরিত্রবান, পরোপকারী, আত্মনির্ভরশীল করে তোলা, আনন্দের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অভ্যস্ত করা। আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই কাব স্কাউট আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। 

কোমলমতি শিশুদের প্রাণোচ্ছল, উদ্যমী, দায়িত্বশীল, সহানুভূতিশীল করার লক্ষ্যে রবার্ট স্টিফেন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল (বিপি) ১৯০৭ সালে ২১ জন বালক নিয়ে ইংল্যান্ডের ব্রাউন্সি দ্বীপে ক্যাম্প একটি আয়োজনের মাধ্যমে স্কাউট আন্দোলনের সূচনা করেন। পরবর্তীতে মেয়েরাও উৎসাহিত হওয়ায় ১৯১০সালে শুরু করেন গার্লস গাইড।

১৯৭২ সাল থেকে স্কাউট আন্দোলনে যাত্রা শুরু বাংলাদেশে। ১৯৭২ সালে ৮-৯ এপ্রিল সারাদেশের স্কাউট নেতারা ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে গঠন করেন বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। 

ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ১১১নং অধ্যাদেশ বলে উক্ত সমিতি সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। এর আগে প্রধান স্কাউটার সলিমুল্লাহ কাহমীর নেতৃত্বে ২২ মে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় গঠিত হয়েছিল ‘ইস্টবেঙ্গল স্কাউট অ্যাসোসিয়েশন’। বিশ্বস্কাউট সংস্থা (WOSM) ১৯৭৪ সালের ১ জুন ‘বাংলাদেশ স্কাউট সমিতিকে’ ১০৫তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ স্কাউট’।

স্কাউট আন্দোলন সকল ছেলেমেয়েদের জন্য উন্মুক্ত। সুষ্ঠু পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশে স্কাউটিং তিনটি শাখায় বিভক্ত ১। কাবস্কাউটস (৬ থেকে ১১ বছর) ২। স্কাউটস (১১ থেকে ১৭ বছর) এবং ৩। রোভার স্কাউটস (১৭ থেকে ২৫ বছর)। কাব অর্থ শাবক বাচ্চা। স্কাউটিং এ ‘কাব’ অর্থে নেকড়ে বাঘের বাচ্চাদের কথা বুঝানো হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী (৬-১১ বছর বয়সের) শিশুদের এই নামকরণের মধ্য দিয়ে উদ্যমী ও সাহসী করে তোলা হয়। 


কাবের মূলমন্ত্র হলো বড়দের কথা মেনে চলা,  আল্লাহ ও দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করা, প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা, আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। 

কোনো কাজে বিফলতায় মুখ ফেরানো নয়। বার বার চেষ্টা করে সফলতা আনা। এতে কাব শিশুরা নিঃসন্দেহে তারা স্কুলের গন্ডির বাহিরে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং নিজেদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। 

কাব শিশুরা কাজ শেখে ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে, নিজেদের কাজ নিজেরা করে, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে দলগতভাবে কাজ করে ফলে মিলেমিশে কাজ করা শেখে এবং নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলী অর্জন করে। যা পরবর্তী জীবনে তাদের দায়িত্বশীল মানুষে পরিণত করে। শহর অঞ্চলের ছেলেমেয়েরা শুধু স্কুল আর বাসা পর্যন্ত আসা-যাওয়া করে, বাহিরের জগৎ সম্পর্কে তাদের ধারণা কম থাকে তাদের কায়িক পরিশ্রম কম হয়। কাবিং কার্যক্রমে বাহিরের খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুদের নিজের কাজ নিজে করা শেখানো হয়। একারণে শিশুদের কাবিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। 
এতে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে তারা নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারবে। কাবদের নিজস্ব পোশাক থাকে। কাবিংয়ের মাধ্যমে শিশুদের আঙ্গুলের বিশেষ কায়দায় সালাম দেয়া ও গ্রহণ করা, ডান হাতে করমর্দন করা ইত্যাদি বিষয় শেখানো হয়। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুরা নিয়মশৃঙ্খলার বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে যা পরবর্তী জীবনে তাদের চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল হতে সাহায্য করে। বর্তমানে বাংলাদেশ স্কাউট বিশ্বে ৫ম স্থানে রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শিশুরা শিখছে পরিবেশ সুরক্ষা, বৃক্ষ রোপণ, দুস্থ, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় অংশগ্রহণ। এমনকি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনগণকে সচেতন করতে কাবেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

দেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি মাদকসহ সকল অসামাজিক কর্মকান্ড দূর করে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রত্যেককেই স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। 

স্কাউট আন্দোলনকে আরো গতিশীল করে ছেলেমেয়েদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক অর্থাৎ পরিপূর্ণ অর্ন্তর্নিহিত ক্ষমতা বিকাশের মাধ্যমে তাদের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তি, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

এই সম্পর্কিত আরো