সিলেটের জৈন্তাপুরে প্রশাসনের খামখেয়ালিপনায় ঝরছে একের পর এক শ্রমিকের প্রাণ। অবৈধভাবে বালি ও পাথর উত্তোলনকালে প্রাণ হারাচ্ছেন দিনমজুর শ্রমিকরা। প্রশাসনের নজরদারী থাকা স্বত্বেও বালি-পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হচ্ছে।
প্রশাসন কি কারণে বালি-পাথর উত্তোলন বন্ধ ও মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারছে না এনিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাদের দাবি এসব কর্মকাণ্ডের সাথে খোদ উপজেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। তাদের স্থানীয় এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা বার বার অবৈধভাবে বালি-পাথর উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেও ‘রহস্যজনক’ কারণে তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এদিকে আজ সোমবার (১২ মে) জৈন্তাপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে মো. কামাল হোসেন (৫০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২৫ এপ্রিল রাতে শ্রীপুর পাথর কুয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে জিল্লুর রহমান দিলুর মারা যান। অবৈধভাবে বালি-পাথর উত্তোলনকালে একের পর এক শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় জৈন্তাপুর উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
তাছাড়া মো. কামাল হোসেনের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘প্রশাসনের গাফিলতি’ বলে দাবি করছেন স্থানীয় লোকজন ও গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁরা ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে বলছেন, উপজেলার ৪ নম্বর বাংলাবাজারে ইজারাবিহীন অবৈধ বালুমহাল থেকে ফেলুডার দিয়ে বালু লোডিং করার সময় কামালের উপর বালু ছেড়ে দেন ফেলুডার চালক সাদ্দাম। আর এতেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় শ্রমিক কামালের। এই ঘটনায় ফেলুডার চালক সাদ্দাম (২৮) পলাতক রয়েছেন। কয়েকদিন থেকে বাংলাবাজারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীরা সরব থাকলেও প্রশাসন এনিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে স্থানীয় লোকজন ও গণমাধ্যমক কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করেছে। তাছাড়া শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্নখানে প্রবাহিত করতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের করতে গিয়ে ফেলুডার চাপায় মৃত্যুর ঘটনার গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করেছেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা। তাছাড়া তার বক্তব্যে ফুঁটে উঠেছে তাচ্ছিল্য।
এ ঘটনা নিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, ফেলুডার ও বালুমহাল বৈধ কি না অবৈধ তিনি পড়ে জানাবেন। গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীরা অবৈধ বালুমহাল নিয়ে সোচ্চার থাকলেও কীভাবে বালু উত্তোলন হয় জানতে চাইলে তিনি বলে এই বিষয়ে তিনি পরে জানাবেন।
তবে স্থানীয়রা প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা ও রহস্যজনক কারণে একের পর এক শ্রমিক প্রাণ হারাচ্ছে। আরা তারা মৃত্যুর খবরটি পর্যন্ত রাখে না। এর আগে ২৫ এপ্রিল রাতে শ্রীপুর পাথর কুয়ারী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে জিল্লুর রহমান দিলু প্রাণ হারান। তারপর প্রশাসন নিরব থাকায় কয়েকদিন পরপর মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে সাধারণ শ্রমিক।
এদিকে জৈন্তাপুর উপজেলার ৪ নম্বর বাংলাবাজারে ইজারাবিহীন অবৈধ বালুমহাল থেকে বালু লোডিং করতে গিয়ে মো. কামাল হোসেন (৫০) নামে এক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহত কামাল জৈন্তাপুর ইউনিয়নের টিলাবাড়ী গ্রামের মৃত জুজু মিয়ার ছেলে। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন। এনিয়ে শ্রমিকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তারা অভিলম্বে ফেলুডার চালক সাদ্দামসহ (২৮) যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করাচ্ছেন তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে দৈনিক সবুজ সিলেটে’র জৈন্তাপুর প্রতিনিধি মো. শোয়েব উদ্দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, এবার শান্ত প্র.....ন । ৪ নং বালুঘাটে শ্রমিকের মৃত্যু না হত্যা? এ দায়ভার কে নেবে?
এর কয়েক ঘন্টা আগে তিনি উপজেলা প্রশাসনকে ফেসবুকে ট্যাগ করে লিখেন, ৪ নম্বর বাংলাবাজার এলাকায় নাপিতখাল লক্ষিপুর নদী ভাঙন কবলিত এলাকা হতে জৈনিক হুজুরের নেতৃত্বে রাতে চলছে বালু তোলার মহাৎসব। গত বছর বন্যায় এই জায়গায় হারুণ মিয়ার ঘর ভেসে গিয়েছিলো। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আরেক সাংবাদিক রেজুয়ান করিম সাব্বির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেন, শ্রমিকের মৃ/ত্যু নিয়ে সত্য চাপা দিয়ে মিথ্যা প্রতিষ্টা করার যৌতিকতা কি ?? ফেলুডার পরিবর্তে গাড়ী চাপা কেন বলব।
জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনী জানান, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে বালুমহাল ও ফেলুডার অবৈধ বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সরজমিনে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মো. মাহবুব বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।