কালবৈশাখী ঝড় আর বৃষ্টির নানা শষ্কা ও উৎকণ্ঠায় থেকে এশিয়া বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে বোরো ধান শতভাগ কাটা সম্পন্ন করে কৃষকরা গোলায় ধান তুলতে পেরেছেন। শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বোরো ধানের ফসল ফলন নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন কৃষকরা।
চৈত্রের শেষ দিকে হাওরে মুষলধারে ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে ফসল তুলা নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা। কিন্তু হাওরে এই বৃষ্টিতে পানি তেমন না জমায় সহজেই ফসল গোলায় তুলেছেন কৃষাণ-কৃষাণিরা। এবার ফলনও ভালো হওয়ায় দারুন খুশি তারা। ফলে হাওর তীরের কৃষকের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত হাকালুকি হাওর। বিশাল এই হাওরের উৎপাদিত ধানই কৃষকের সারাবছরের খোরাক হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। ধান কাটা শেষ হলেও কৃষকেরা এখন ব্যস্ত ধান মাড়াইয়ে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও বোরো ধান গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হঠাৎ ঝড় বৃষ্টির ভয়ে পরিবারের ছোট-বড় অন্য সদস্যরাও সহযোগিতা করছেন বড়দের। পুরোদমে চলছে ধান শুকানোর কাজ।
জানা যায়, এপ্রিলের শুরু থেকে বৃষ্টি হলেও তা ধারাবাহিকভাবে না হওয়ায় এবার ধান কাটায় কোন প্রভাব পড়েনি। যা সৃষ্টিকর্তার দয়া ও আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এই বছর সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮০৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর সিংহভাগই পুরণ হবে হাকালুকির উৎপাদিত ধান থেকে।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, কুলাউড়া উপজেলায় এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮ হাজার ৬৯০ হেক্টর। এর মধ্যে হাকালুকি হাওরে ৫ হাজার ৪৬০ হেক্টর। এর মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ৫০ একর জমিতে সমালয়ে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে সব লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হয়েছে।
জুড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান বলেন, শিলাবৃষ্টি, ভারিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢল এসবের শষ্কা ছিল, তবে এবার কোনটাই হয়নি। যা সৃষ্টিকর্তার দয়া। জুড়িতে ৬ হাজার ৯০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। হাকালুকি হাওরের বড়লেখা উপজেলা অঞ্চলে এবার ৩ হাজার ৬০০ হেক্টরে বোরো আবাদ হয়েছে। সাড়ে ২২ হাজার মে. টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করলেও ভালো ফলনের কারনে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।
সরেজমিনে হাকালুকিতে গেলে কুলাউড়ার অংশে ভূকশিমইলের মীরশংকর এলাকার মাছুম মিয়া,সাইফুল ইসলাম, তছিম মিয়া, কুরবানপুরের ফটিক মিয়া, উত্তর সাদিপুরের শাহীন মিয়া, গৌড়করনের আলাউদ্দিন,ফুয়াদ মিয়া,লয়েক মিয়া ও শাহাপুর এলাকার আছলিম মিয়া বলেন, আল্লাহর রহমতে এবার যেমন বৃষ্টি বেশি হয়নি তেমনি বন্যাও হয়নি। ধান বের হওয়ার সময় প্রথমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু মাঝে মধ্যে আল্লাহ রহমতের বৃষ্টি দিয়েছেন। এ জন্য ফলন ভালো হয়েছে। অন্যান্য বছর বোরো ধান কাটার সময় এলে বন্যা চলে আসতো কিন্তু এবার তা হয়নি। কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহর প্রতি। এবার বোরো ধানের ফলন চাহিদার চেয়েও ভালো হওয়ায় আমরা সবাই দারুন খুশি।