শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

সিলেটের চা-বাগানে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৬০ হাজার নারী শ্রমিক

সুবর্ণা হামিদঃ প্রতিদিনই সিলেটের চা-বাগানগুলোতে কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে দিন পার করছেন প্রায় ৬০ হাজার নারী শ্রমিক। কর্মপরিবেশের দুরবস্থা, চিকিৎসার অপ্রতুলতা ও পুষ্টির ঘাটতি তাদের জীবনকে করে তুলেছে অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোতে বর্তমানে মোট শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার, যার অর্ধেকেরও বেশি নারী। অথচ এ বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য নেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা বা সচেতনতা কার্যক্রম।

চা পাতার ঝোপের ভেতরে দীর্ঘ সময় কাজ করা, ভারী ঝুড়ি বহন ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে তাদের স্বাস্থ্য ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে। নারী শ্রমিকরা প্রতিদিন চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই অপুষ্টি এবং চিকিৎসা সেবার অভাবে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় দেখা দিচ্ছে।

চা শ্রমিক নারীদের অধিকাংশই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করেন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকার কারণে নানা রকম সংক্রমণ ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়ায় গর্ভকালীন ও প্রসূতি স্বাস্থ্য পরিস্থিতিও মারাত্মক হয়ে উঠেছে।

এ ব্যাপারে চা শ্রমিক নারীদের সাথে কথা বললে চা-শ্রমিক কমিউনিটির নারী শ্রমিক সুমি নায়েক সবুজ সিলেটকে বলেন- আমরা প্রায় সময়ই অসুস্থ হই, কিন্তু বাগানে ডাক্তার পাই না। অসুস্থ হলে সেই সরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। তিনি জানান, গর্ভকালীন সময়েও তাকে নিয়মিত কাজ করতে হয়েছে। বিশ্রামের সুযোগ ছিল না, ছিল না ওষুধের ব্যবস্থাও। চা শ্রমিকরা দৈনিক গড়ে ১৭৮ টাকা মজুরি পান। এই আয় দিয়ে তারা খাবার, ওষুধ কিংবা চিকিৎসা কিছুই ঠিকমতো নিশ্চিত করতে পারেন না।

৪৫ বছর বয়সী চা শ্রমিক মঙ্গলী দাশ বলেন, সকাল সাতটা থেইক্যা কাজ করি, কিন্তু বিশ্রামের জায়গা নাই। চিকিৎসা লাগলে নিজ খরচে বাইরে যাইতে হয়। আর সরকারি হাসপাতাল গুলো তো নামে সরকারি কামে না।ঐখানে বেশির ভাগ ঔষধ ও পরিক্ষা টাকা দিয়া করতে হয় । 

এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের সাথে কথা বললে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম রব মাহমুদ শোয়েব সবুজ সিলেটকে জানান - চা বাগান এলাকায় অধিকাংশ নারী শ্রমিক গাইনোকলজিক্যাল সমস্যা, ইউরিনারি ইনফেকশন ও চর্মরোগে বেশি আক্রান্ত হন। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাব এসব সমস্যাকে আরও তীব্র করে তোলে। ফলে অপুষ্টি, অ্যানিমিয়া, প্রসবজনিত জটিলতা, হাড়ের রোগসহ নানা সমস্যায় তারা আক্রান্ত হন। তিনি আরো বলেন - নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে আগামী দিনে চা শিল্পের ভবিষ্যৎ সংকটে পড়বে।

সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: মো: আনিসুর রহমান বলেন - আমরা চা বাগানে মোবাইল মেডিকেল টিম পাঠানোর চেষ্টা করছি।প্রতি সাপ্তাহে এক দিন তাও সব জায়গায় নয় শুধু বড় বড় চা বাগান গুলোতে। চা শিল্প বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খাত আর এই খাতের মেরুদণ্ড গড়ে তোলার পেছনে যে নারীদের অবদান সবচেয়ে বেশি, তাদের জীবনই আজ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয় আরও সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। তিনি আরোও বলেল- চা শ্রমিকরা আমাদের মত জীবন যাপন করছে না তাদের জীবন মান সম্পূর্ণ আলাদা আর আমরা চাইলেও না না কারণে  তাদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই না তাই ইচ্ছে থাকলেও তাদের জন্য কাজ করা যায় না।

এ ব্যাপারে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (একডো) এর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ সবুজ সিলেটকে জানান -চা বাগানের বেশিরভাগ নারী শ্রমিকই পর্যাপ্ত পুষ্টি পান না। দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কাজের পর তারা ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়েন। তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ গর্ভবতী নারীই গর্ভকালীন কোনপ্রকার স্বাস্থ্যপরীক্ষার সুযোগ পাননা। তাছাড়া অধিকাংশ গর্ভবতী নারী ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতেই প্রশিক্ষণবিহীন ধাত্রীদের সহায়তায় সন্তান প্রসব করে থাকেন। এমতাবস্থায় অনেক মা এবং নবজাতক শিশুরও মৃত্যু ঘটে। সুতরাং এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা উচিৎ। তিনি আরও বলেন - তাই আমরা আগামীতে চেষ্টা করবো কয়েকজন ধাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার।

এই সম্পর্কিত আরো