হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস শরীফ উপলক্ষ্যে ৭০৬ বছরের প্রাচীন লাকড়ি তোড়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) শত শত বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব ঘিরে আজ সিলেটে সৃষ্টি হয় এক উৎসবমুখর, আধ্যাত্মিক পরিবেশ। সকাল থেকেই সিলেট শহর, শহরতলী, বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে হাজারো ভক্ত-আশেকান বাদ্য বাজিয়ে, স্লোগান তুলে দলে দলে হাজির হন হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে দরগাহ প্রাঙ্গণে।
‘শাহজালাল বাবা কী জয়’, ‘৩৬০ আউলিয়াকি জয়’, ‘লালে লাল বাবা শাহজালাল’—এই সব হৃদয়স্পর্শী স্লোগানে মুখরিত হয় সিলেট নগরী। ভক্তরা মিছিল আকারে লাক্কাতুরা চা-বাগানের দিকে রওনা হন এবং সেখানে থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে উৎসবের অংশ হিসেবে দরগাহে ফিরিয়ে আনেন।
মৌলভীবাজার থেকে আসা আব্দুল খালেক নামের এক ভক্ত বলেন, “আমি গত দশ বছর ধরে এই উৎসবে অংশ নিচ্ছি। আমার বিশ্বাস, এই লাকড়ি তোলা শুধু ঐতিহ্য নয়, এটা আমাদের ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশের একটি উপায় শাহজালাল (রহ.)-এর প্রতি।”
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে আসা খাদিজা বেগম বলেন, “এই দিনটার জন্য আমরা সারাবছর অপেক্ষা করি। এখানে এসে আত্মা শান্তি পায়, এই জমায়েতে যেন আধ্যাত্মিক শক্তি ভর করে। একসঙ্গে সবাই লাকড়ি তুলি, আল্লাহর ওলির জন্য কিছু করতে পারার অনুভূতিটাই আলাদা।”
শুধু সাধারণ ভক্তই নয়, বাউল সংগঠন, খানকা শরিফ ও বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মানুষজনও এই উৎসবে যোগ দেন। কেউ নাচ-গান করে, কেউ গজল পাঠ করে, আবার কেউ নীরবে ভক্তিভরে অংশ নেন এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।
ইতিহাসবিদদের মতে, হজরত শাহজালাল (রহ.) নিজেই জীবদ্দশায় লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করতেন। সেই প্রথা অনুসরণ করেই প্রায় সাতশ’ বছর ধরে এই লাকড়ি তোলা উৎসব ওরসের তিন সপ্তাহ আগে পালন করা হয়। সংগৃহীত লাকড়িগুলো দরগাহ শরীফের নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করা হয় এবং ওরস উপলক্ষে সেই লাকড়ি দিয়েই রান্না হয় তবারুক, যা হাজার হাজার ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়।