সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ইতিমধ্যে তের বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। ইলিয়াস আলীর শূন্যতায় দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত ভুগছে তার নির্বাচনী এলাকা ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গন। তিনি কোথায় আছেন কেমন আছেন এ খবর অদ্যাবদি কেউ জানতে পারেনি।
এ অঞ্চলের সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার নির্বাচনী এলাকা ওসমানীনগরের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ইলিয়াস পত্নী লুনা এই শুন্যতার কিছুটা পূরনের প্রচেষ্টায় তৎপর থাকলেও সাধারন কর্মী ও সমর্থকরা ইলিয়াস আলীর প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন। ইলিয়াস আলীর সন্ধানের ব্যাপারে আশা নিরাশার দোলাচলে রয়েছে তদুপরিও ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চান কর্মী- সমর্থকরা। ইতিপূর্বে নানা গুজব শুনা গেলেও তারা এসব মানতে নারাজ। সবকিছু উপেক্ষা করে তারা জানতে চান কোথায় আছেন কেমন আছেন প্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী। তাঁকে ফিরে পাওয়ার প্রতিক্ষায় বয়েছেন নির্বাচনী এলাকা বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তাদের প্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন এবং সুস্থ আছেন। এবং তিনি ফিরে আসবেন। ইলিয়াস আলীর প্রতি ভালোবাসার টানে সাধারন মানুষ হন্যে হয়ে খুজছেন তাকে।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল এম ইলিয়াস আলী গুমের ১৩ বছর পূর্ণ হলেও অপেক্ষায় ক্লান্ত নয় এ জনপদের বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তারা এখনও ইলিয়াস আলী ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে আছেন।
এদিকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দমন-পীড়নে কোণঠাসা ওসমানীনগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গত ৫ আগষ্টের পর থেকে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এতে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা সিলেট-২(ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিভাবক হয়ে কাজ করছেন। তাই নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সন্ধান না পাওয়া গেলে আগামী নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে নেতাকর্মীরা লুনাকে নিয়েই সপ্ন দেখছেন।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের চাপে দলের রাজনীতি থেকে রীতিমতো নির্বাসিত নেতাকর্মীরা এখন সক্রিয় রয়েছেন ।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন এম. ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনছার আলী। নিখোঁজের ১৩ বছর হয়ে গেল, এখনও অজানা রয়ে গেছে তার নিখোঁজের রহস্য। দীর্ঘ একযুগ ধরে তার সন্ধান চেয়ে বিএনপি দেশ-বিদেশে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎসহ নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আশায় ছিলেন পরিবার ও দলের নেতাকর্মী ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন কিন্তু সেটাও হলো না। তবুও তারা ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে আশায় বুক বেঁধে আছেন। তাদের দাবি ইলিয়াস আলী এখনও বেঁচে আছেন এবং বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মাধ্যমে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনসহ অক্ষত অবস্থায় ফেরত চান দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়ে ওসমানীনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রকিব আলী বলেন, 'আমাদের নেতা এম ইলিয়াস আলী অবশ্যই ফিরে আসবেন এই আশায় আমরা অপেক্ষায় আছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের নেতাকে গুম করেছিল। আমাদের আশা এবং প্রত্যাশা ছিল হাসিনা পালিয়ে যাবার পর পরই আমাদের নেতাকে অন্তরবর্তী সরকার খুজে বের করে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে। কিন্তু এই সরকারের ৯ মাস অতিবাহিত হলেও এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়া বা গুমের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। সরকারের নিকট আমাদের দাবি অচিরেই গুমের রহস্য উদঘাটন করে সুস্থ অবস্থায় আমাদের নেতা ইলিয়াস আলী ফিরে দিয়ে এর সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার।
সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ওসমানীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ইসলাম উদ্দিন বলেন, এম ইলিয়াস আলী মাটি ও মানুষের নেতা তিনি অবশ্যই ফিরে আসবেন। 'ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা ইলিয়াস আলীর ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি। বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের গুম কমিশনের কাছে দাবী একটাই জনতার নেতা ইলিয়াস আলীকে ফেরত চাই।