সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের মাঠে যেন সোনা ছড়ানো আছে। যে দিকে চোখযায় সেদিকেই যেন চোখে পড়ে বিস্তৃত সোনালীধান। যেন ফসলের জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাড়ভাঙ্গা প্ররিশ্রম করা কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার উৎসব। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে চলছে নতুন ধান, কাটা মাড়াই ও শুকানোর কাজ।
গত বছর থেকে এবার ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ধান বিক্রি করে সংসারের যাবতীয় খরচ পোষাতে চাইছেন কৃষক। তবে এ সবের মাঝে ও কৃষকদের কপালে দু:শ্চিন্তার ভাজ। প্রাকৃতিক দুর্বোগের আশংকায় কৃষকদের মাঝে বিরাজ করছে আতংক। ঝড় শিলা বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ চোখ রাঙ্গাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপকে। কখন যেন চুরমার করে দেয় সেই স্বপ্ন। আবাহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং রোগ বালাই না থাকায় এবং জামালগঞ্জ উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এ বছর ২৪ হাজার ৫শত ৫ হেক্টর জমিতে বোরো এর মধ্যে হাওরে ১৭ হাজার ৫শত ৮০ হেক্টর জমি এবং নন হাওরে ৬ হাজার ৯শত ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছে কৃষকেরা। ইতিমধ্যে নতুনধানবাজারে উটতে শুরুকরেছে। বর্তমানেপ্রতিমন মোটাধান ৯শত টাকা আর চিকনধান ১ হাজারটাকা থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। উৎপাদিত ধানের দাম ভালো পাওয়ায় খুশী কৃষকেরা। প্রচন্ড তাপদাহ থাকলে ও মাট ছাড়ছেনা কৃষকেরা। ধান কাটা মাড়াই করা, ধান শুকানো, খড় শুকানোর কাজ নির্বিগ্নে করছেন কৃষকেরা।
ফেনারবাঁক ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কৃষক সাইকুল ইসলাম জানান এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যদি আগামী১৫-২০দিন কোন ঝড় বৃষ্টিনা হয় তাহলে আমরা শত ভাগ ধান কাটা মাড়াই শেষ করতে পারবো। ধান কাটার মেশিন ও পর্যাপ্ত রয়েছে। কম্বাইন্ডহারভেষ্টার মেশিনে ধান কাটা মাড়াই ও বস্তায় ভরে বাড়িতে এনে ১ রোদ দিলেই হয়। তবে সরকারিভাবে ঝড় বৃষ্টি আশঙ্কা থাকার কারনে ঘোষনা করা হয়েছে ৮০ ভাগ ধান পাকলেই ধান কেটে ফেলতে হবে। তাই সবাই দ্রুত ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কৃষক আপ্তাব উদ্দিন জানান, বর্তমানে খনা থেকে মোটা ধান ৯শত টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে ধানের দাম বাড়ায় আমরা খুশী। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সব ধান কাটা যাবে, নতুবা কৃষকের সর্বনাশ হবে।
জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের অভিজ্ঞ কৃষক হাজী নুরুল ইসলাম বলেন, কোন দুর্যোগ না থাকলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ হবে। এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৫ মন ধান হয়েছে। কম্বাইন্ডহারবেষ্টার মেশিনে প্রতি বিঘায় ১৪ শত থেকে ১৭ শত টাকায় ধান কাটা হচ্ছে। সরকারি ঘোষনায় সবাই দ্রুত ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কায়ছার আহমদ বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং কোন সংকট না থাকায় এবছর এই উপজেলায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষকেরা ধান কাটতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত হাওরে ৫হাজার ২শত ৭৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০% ধান কর্তন হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদেরকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছেন।
তিনি আরো ও জানান, আগামী ৫ ই মে এর মধ্যে হালির হাওর এবং ১৬ তারিখের মধ্যে পাকনার হাওরসহ সকল হাওরের ধান কাটা শেষ হবে। কম্বাইন্ডহারবেষ্টার মেশিন উপজেলার ১৪০টি সহ বহিরাগত আরও ১২টি কম্বাইন্ডারহারভেষ্টার ধান কাটায় ব্যস্ত আছে। আশা করি কোন বড় ধরনের দুর্যোগ না হয় তাহলে খুব ভালো একটা বোরো মৌসুম হবে এবার।