ভাটির সিংহ পুরুষ খ্যাত দিরাই শাল্লার সাবেক এমপি বিএনপি নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী ও দুই মেয়েকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর দুই সৎ ভাই দিরাই উপজেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহবায়ক মাসুক চৌধুরী ও যুবদল নেতা মিলন চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
দিরাই উপজেলা পরিষদ ভবন সংলগ্ন বাসায় শয্যাশায়ী নাছির চৌধুরীকে দেখতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁর দুই মেয়েসহ দ্বিতীয় স্ত্রী।
শুক্রবার রাতে হৃদয়বিদারক এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় দিরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন নাছির চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন আকতার।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, শুক্রবার ১৮ এপ্রিল মধ্যরাতে খাবার টেবিলে বসা অবস্থায় মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরী অকথ্য ভাষায় তাদের গালিগালাজ করেন। এ সময় প্রতিবাদ করলে প্রথমে কিল-ঘুষি পরে লাঠি, রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। এতে রক্তাক্ত ও আহত হন পারভিন আকতার, তার মেয়ে নাজিয়া চৌধুরী (২০) ও নাদিয়া চৌধুরী (১৯)।
বেশ কিছুদিন যাবৎ নাছির চৌধুরী অসুস্থ রয়েছেন। তিনি ভাইদের সঙ্গে দিরাইয়ের বাসায় থাকেন। নাছির চৌধুরীকে দেখতে দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে দিরাইয়ের বাসায় যান পারভিন আকতার। এরপরই এ ঘটনা ঘটে। এ-সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও ভিডিও রেকর্ড ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেও নাছির চৌধুরীর সৎভাই মাসুক চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অডিও রেকর্ড ও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন আকতার শনিবার রাতে বলেন, থানায় অভিযোগ দিয়ে এসেছি। আমাদের যখন মারধর করে বের করে দেয়, তখন কেউ এগিয়ে আসেনি। একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়ে রাতে জীবন রক্ষা করেছি। বর্তমানে আমরা দিরাইয়ের একজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। ছোট মেয়ের কানে ঘুষি মারায় ভেতরে রক্ত জমে গেছে। বড় মেয়ের কপালে ঘুষি মারায় চোখের নিচে রক্ত জমে আছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিল-ঘুষি ও রডের আঘাত রয়েছে। আমারও বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম রয়েছে।
পারভিন আকতার অভিযোগ করে বলেন, নাছির চৌধুরীকে আটকে রেখে সব সম্পত্তি ধীরে ধীরে নিজেদের নামে স্থানান্তর করছেন তার দুই সৎ ভাই মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরী। ভাটির জনপ্রিয় এ নেতাকে সঠিক চিকিৎসা না করিয়ে দিরাইয়ের বাসায় জিম্মি করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তারা। আমি উন্নত চিকিৎসার জন্য নাছির চৌধুরীকে ঢাকায় নিতে চাইলে তারা নিতে দেয়নি। তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও সৎভাইয়েরা করছেন না। এর কারণ এভাবে বাসায় বসিয়ে অসুস্থ রেখে ভাইয়ের ইমেজকে পুঁজি করে সংসদ-সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মাসুক চৌধুরী।
দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলেছি তিনি জিডিও করে গেছেন। আদালতের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালে নিঃসন্তান নাছির চৌধুরী ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। স্ত্রী পারভিন আকতারের গর্ভে জন্ম হয় দুই কন্যা সন্তান নাজিয়া ও নাদিয়ার। কয়েক বছর আগে নাছির চৌধুরীর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যেই পক্ষাঘাতগ্রস্থ হন নাছির চৌধুরী। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর মাঝে মধ্যে ঢাকা থেকে তাকে দেখতে দিরাইয়ে ছুটে যান স্ত্রী পারভিন আকতার ও দুই সন্তান নাজিয়া ও নাদিয়া। কিন্তু কোনোভাবেই নাছির চৌধুরীর স্ত্রী-সন্তানদের ওই বাসায় থাকতে দিতে চান না নাছির চৌধুরীর সৎভাইয়েরা। প্রথম স্ত্রীর জীবদ্দশায় মাঝে মধ্যে নাজিয়া ও নাদিয়া বাবাকে দেখতে দিরাইয়ের বাসায় আসতো বলে জানান স্থানীয়রা।