চলতি বছরের বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের শাল্লায় বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের মুখে সোনালী হাসি। বৈশাখের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে স্বপ্নের ফসল তুলতে ঘরে-বাহিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওর পাড়ের কৃষক-কৃষাণিরা। সোনালী ফসল তুলতে স্কুল,কলেজের শিক্ষার্থীরাও বসে নেই। চলছে ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই, রোদে শুকিয়ে শেষে গোলায় তোলার মহাব্যস্ততা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ঘরে তোলার আশা বাঁধছেন কৃষকরা। উপজেলার ছায়া,ভরাম,কালিয়ারকোটা সহ মোট ছয়টি হাওরেই ফলনের কোন কমতি নেই। প্রত্যেক হাওরেই ফলেছে বাম্পার ফলন। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, হাওরের অধিকাংশ ফসল ৮০ ভাগ পরিপক্ব,বিসৃত মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালী ধান। ধান কাটার ধুম পড়েছে মাঠে মাঠে। কোনো কোনো হাওরে শ্রমিক সংকট থাকলেও সেই সংকট নিরসনে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন,কৃষি অধিদপ্তর সহ তাদের সকল মাঠকর্মীরা। বৈশাখের প্রখর রোদ্দুর ও তাপদাহ মাথায় নিয়ে কাজ করছেন কৃষকরা।
কৃষক-শ্রমিক মিলে কাটছেন ধান। হাতে কাটা ধান মাড়াই হচ্ছে বোমা মেশিনে। কিছু কৃষকরা ধান কাটাচ্ছেন মেশিনের (কম্বাইনহারভেস্টার) সাহায্যে। ধান তোলার কাজে কোমর বেঁধে নেমেছেন কৃষাণিরাও। কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার ছয়টি হাওরে মোট ২১৬৯৯ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় উফশি ও হাইব্রিড জাতের ধান বেশি চাষ করেছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের উদ্যােগে হাওরে বেশকিছু প্রদর্শনী প্লটও রয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, সময়মতো সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার ভান্ডাবিল হাওরে কথা হয় কৃষক সবুজ মিয়া সাথে। তার চোখেমুখেও যেন সোনালী হাসির চাপ। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবছর ফলন খুব ভাল হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তিনি মাড়া কাটা (ধান কাটা) শেষ করতে পারবেন বলে জানান।
কথা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সৈকত জামিল বলেন, কৃষকদের সাথে কথা বলে ও হাওর ঘুরে দেখেছি ফলন খুব ভাল হয়েছে। ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে । আমরা প্রতিদিন হাওরে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে যাচ্ছি। আবহাওয়া অনূকূলে থাকলে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ধান কর্তন শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
কৃষি কর্মকর্তা জানান,ইতিমধ্যেই পুরো উপজেলায় গড় কর্তন হয়েছে ৪৪ ভাগ। মোট ধান উৎপাদন হবে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩শ ৬৭ মেট্রিকটন। যার বাজারমূল্য ৫১৬ কোটি টাকা।