সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে বোরো ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে জেলা বিএনপি ও কৃষকদল।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে শহরের পুরাতন বাস স্টেশনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলা একটি বোরো প্রধান এলাকা। ২৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এখানকার প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল। নিম্বাঞ্চল হওয়ায় বছরের একবার মাত্র ধান আবাদের সুযোগ পান কৃষকরা। এবং এই বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল তাঁদের জীবন-জীবিকা।
২০২৫ চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এবছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে এই জেলা থেকে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় বিপুল পরিমাণ যোগান দিয়ে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুনামগঞ্জ জেলায় বিপুল বোরো আবাদ ও উৎপাদনের বিপরীতে কৃষকের নিকট থেকে ধান সংগ্রহের পরিমাণ অপ্রতুল। অথচ জেলায় মোট কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭ জন। এবার সুনামগঞ্জ জেলায় কৃষক পর্যায় থেকে মাত্র ১৪ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন ধান সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হবে, যা বিগত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এই হিসেবে পৌনে চার লাখ কার্ডধারী কৃষকের মধ্য থেকে মাত্র সাড়ে ১৪ হাজার কৃষক সরকারি গোদামে ধান সরবরাহের সুযোগ পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বছর বছর এই জেলায় ধানের উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েই চলছে। এই হিসেবে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি কৃষকের মধ্যে একেবারে স্বল্প সংখ্যক সরকারিভাবে ধান সরবরাহের আওতায় আসবেন। যা হাওর অধ্যুষিত পিছিয়ে পড়া একটি জেলার জন্য কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। সেইসাথে এমন উদ্যোগে বোরো ধান আবাদে কৃষকদের মাঝে অনিহা সৃষ্টি করবে বলে আমরা এই আশঙ্কা করছি। একইভাবে বিগত বছর মিলারদের ২৫ হাজার মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এবারের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এই অঞ্চলের মিলগুলোর বেশিরভাগ আতপ চাল উৎপাদন করায় চাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিষয়টি নজরে রাখা প্রয়োজন। যাতে সুযোগটির সুবিধা এষানকার কৃষকরা পান।
কৃষক পর্যায় থেকে বোরো ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে চার দফা দাবি তোলে বিএনপি ও কৃষক দল।
সেগুলো হচ্ছে, হাওরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষেকের স্বার্থে চলতি বোরো ধান সংগ্রহ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে সরকারিভাবে ধান বেশি করে ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া৷ অতিরিক্ত ধান গোদামজাত করতে প্রয়োজনে অন্য জেলার গোদামে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। ফ্যাসিবাদ আমলে তৈরি কৃষিকার্ডগুলো পুনরায় যাচাইয়ের উদ্যোগ নিতে হবে, যেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই অকৃষক দলীয় কর্মীদের প্রদান করা হয়েছে। ধান-চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে হাওরের প্রকৃত প্রান্তিক কৃষদের অর্ন্তভুক্ত করা এবং ধান-চাল সরকারিভাবে সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনও সিন্ডিকেট যেন সুবিধা নিতে না পারে, সেই ব্যাপরে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকা।
জেলা কৃষক দলের আহবায়ক আনিসুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুল ওয়াদুদের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জেলা বিএনপি স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত সদস্য অ্যাড. আব্দুল হক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি নেতা মল্লিক মঈন উদ্দিন সোহেল, অ্যাড. মাসুক আলম, অ্যাড. শেরেনূর আলী, অ্যাড. নূরুল ইসলাম নূরুল, মোনাজ্জির হোসেন সুজন, সাইফুল্লাহ হাসান জুনেদ, নজরুল ইসলাম, রাকাব উদ্দিন, আ ত ম মিসবাহ, মোর্শেদ আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মুনাজ্জির হোসেন, সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম, কৃষক দল নেতা সিরাজুল ইসলাম পলাশ প্রমুখ।