আজ ৯ এপ্রিল, সিলেট মেডিকেল কলেজ গণহত্যা দিবস। আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডুকে গুলি করে হত্যা করে শহিদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ, ডা. শ্যামল কান্তি লালাসহ ৯ জনকে। এই বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে আজ।
বুধবার (৯ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন নাগরিক মৈত্রী, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সিলেট কিডনি ফাউন্ডেশন, যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলা কমিটি, শহিদ পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পূর্বে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নাগরিক মৈত্রী'র আহবায়ক অ্যাডভোকেট সমর বিজয় সী শেখরের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মনির উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, পরিবেশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সভাপতি ও ধরার আহবায়ক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার।
এসময় বক্তারা সিলেট মেডিকেল কলেজ গণহত্যার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে সিলেট শহরে চলছিল প্রচণ্ড যুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটায় কিছুদিনের জন্য মুক্ত সিলেটের জেল ভেঙে রাজনৈতিক ও অন্যান্য কয়েদিকে ছাড়ানো হলো। সবাই তখন কারফিউ ভাঙার কারণে সিলেট ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে লাগলেন। তখন পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ আহত মানুষ দিয়ে সিলেট মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। মেডিকেল কলেজের সার্জারির প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালটিকে কয়েক দিন থেকে সারাক্ষণ আগলে ধরে আছেন। সবাই চলে গেছে শুধু একজন তরুণ ডাক্তার শ্যামল কান্তি লালা তার পরম শ্রদ্ধেয় অধ্যাপককে রেখে কোথাও যাবেন না। অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলী সারাক্ষণ আহত মানুষকে তুলে আনছেন। নার্স মাহমুদুর রহমান আর ওয়ার্ড বয় মুখলেসুর রহমান অপারেশন থিয়েটারে আর ওয়ার্ডে অধ্যাপককে সহায়তা করতে ব্যস্ত। ডা. শামসুদ্দিন বিপদ বুঝে আগেই অন্য নার্সদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ৯ এপ্রিল শহরে ঢুকেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবেশ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে নিয়ে আসে অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ ও তার সহকর্মীদের আর কিছু রোগীদের। তারপর সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরেই গুলি করে তাদের হত্যা করে। সেদিন সেই গণহত্যার সাক্ষী ছিলেন মারা যাবার ভান করে পরে থাকা গুলিবিদ্ধ ওয়ার্ড বয় মুখলেসুর রহমান।সিলেট জেলা ট্যুর প্যাকেজ
এসময় বক্তারা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতক পার হলেও এই গণহত্যার কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয় এই স্বীকৃতি না দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যা আমাদের জন্য লজ্জার। অবিলম্বে এই গণহত্যার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবী জানান তারা।
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে উপস্থিত ছিলেন- সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মনির হেলাল, শহিদ পরিবারের সদস্য ফরিদা নাসরীন, সমাজকর্মী রোমেনা বেগম রোজি, রেজাউল কিবরিয়া লিমন, অ্যাডভোকেট সুদীপ্ত অর্জুন, অ্যাডভোকেট অরূপ শ্যাম বাপ্পা, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, অ্যাডভোকেট গোলাম সোবহান চৌধুরী দীপন, অ্যাডভোকেট মোস্তাকিম আহম্মদ কাওছার, অ্যাডভোকেট নিরঞ্জন দাশ খোকন, প্রভাষক রাজীব দে চৌধুরী, প্রভাষক ফজলে রাব্বি চৌধুরী, পার্থ সারথী টিটু, বি এইচ আবীর, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন সিলেট কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট বিদ্যুৎ কুমার দাশ বাপন, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শুভ্র দে, মোজাম্মেল হোসেন, সাংবাদিক শাকিলা ববি প্রমুখ।