সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে এসিল্যান্ড মোহাম্মদ আবুল হাসনাতের বিরুদ্ধে একজন খামারিকে ধরে নিয়ে গিয়ে সাত ঘন্টা আটকে রেখে অসদাচরণ ও অনৈতিক অর্থদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। গত বুধবার রাতে উপজেলা ভূমি অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের লম্বাকান্দি গ্রামে একটি মডেল প্রদর্শনী খামারের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করতে যান এসিল্যান্ড ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। উদ্বোধন শেষে খামারি মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার ঘরে তারা খানাপিনা করেন। ফেরার সময় খামারিকে গাড়িতে উঠতে বলেন এসিল্যান্ড। সরল মনে সে গাড়ি উঠে বসে। ভূমি অফিসে নিয়ে গিয়ে তার বিরুদ্ধে খামারে অবৈধ পাথর ব্যবহারের অভিযোগ আনেন। ছাড়া পেতে চাইলে এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে বলেন। রাত ৮টা পর্যন্ত অফিসের একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রাখেন।
এ বিষয়ে ইসহাক বলেন, আমি একজন দরিদ্র খামারি। গবাদি পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সরকারি অর্থায়নে আমাকে একটি মডেল প্রদর্শনী খামার করে দিচ্ছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এসিল্যান্ড এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমার বাড়িতে আসেন। প্রদর্শনী খামারটির কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারপর আমি যথাসাধ্য আপ্যায়ন করাই। আপ্যায়ন শেষে তিনি আমাকে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। উপজেলা ভূমি অফিসে এনে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। এসিল্যান্ড আমাকে বলেন, আপনার এখানে অবৈধ পাথর পাওয়া গেছে, স্বীকার করুন আপনি দোষী। আমি জানাই, কাজের ঠিকাদার একটি ক্রাশার মিল থেকে পাথর এনেছেন। এসময়ও পাথর কেনার রিসিট তাকে দেখাই। কিন্তু, তারপরও আমাকে রাত ৮টা পর্যন্ত আটকে রাখেন। এক লাখ টাকা এনে দিলে ছাড়বেন। না হয় আমাকে জেলে দেওয়ার ভয় দেখান। একপর্যায়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে জনচলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রাখার অপরাধ আনেন এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।
তিনি বলেন, এমন অসম্মানজনক কর্মকাণ্ডে আমি অবাক হয়েছি। আমি কল্পনাও করতে পারছি না, এসিল্যান্ড আমার সাথে এমন আচরণ করবেন। আমি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এ ঘটনার প্রতিকার চাইবো।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, 'খামার উদ্বোধনে ইউএনও সাহেবকে যেতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি ছুটিতে থাকায় এসিল্যান্ডকে নিয়ে যেতে বলেন। এসিল্যান্ড আমার সাথে ওখানে গেস্ট হিসেবে গিয়েছিলেন। আমরা খামারের কাজের উদ্বোধন করি। ইসহাকের ঘরে খানাপিনা করি। পরে এসিল্যান্ড যা করলেন–সেটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এটি অমানবিক এবং অসামাজিক একটি কাজ হয়েছে। যা তার কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য ছিলো না।'
এ বিষয়ে এসিল্যান্ড আবুল হাসনাত বলেন, 'নির্মাণ কাজে অবৈধ পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। তাই তাকে গাড়িতে করে সসম্মানে আনা হয়েছে। ধরে আনা হয়নি। অফিসের একটি কক্ষে তাকে বসতে দিয়েছি। গরিব খামারি, তাই তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করিনি। ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দিয়েছি।'