✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

বালাগঞ্জের শিওরখাল মাঝপাড়ার উন্নয়ন: প্রবাসী কয়েছের আন্তরিক উদ্যোগ

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার এক নিভৃতপল্লী শিওরখাল মাঝপাড়া । সবুজ শ্যামল ক্ষেত, শান্ত নদী, হাওর আর গ্রামের সরল মানুষের হাসিমাখা মুখ—এক অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্যপট। কিন্তু এই সৌন্দর্যের আড়ালে ছিল এক দীর্ঘশ্বাসের গল্প—শিওরখাল মাঝপাড়ার সংযোগ সড়ক।

প্রতিদিন শত শত মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। কৃষক তাঁর ক্ষেতের ফসল বাড়ি আসেন এবং বাজারে যান, শিশুরা স্কুলে যায়, কেউ যান চিকিৎসার প্রয়োজনে, আবার কেউ জীবিকার খোঁজে। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশা ছিল তাঁদের নিত্যদিনের দুর্ভোগ। বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি কাদা আর জলাবদ্ধতায় অতিক্রম করা কঠিন হয়ে পড়ত। অনেকেই হাঁটু পর্যন্ত কাদায় ডুবে গন্তব্যে পৌঁছাতেন, কেউ আবার পা পিছলে পড়ে যেতেন।

এই দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে এক মহতী উদ্যোগ নিলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মানবাধিকার কর্মী রেজওয়ান আলী কয়েছ। শৈশবে যে গ্রাম তাঁকে গড়ে তুলেছিল, সেই গ্রামকে কিছু ফিরিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন তিনি।

২০২৩ সালের শুরুতে রেজওয়ান আলী কয়েছ সিদ্ধান্ত নেন, শিওরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিক থেকে হাজী মরহুম জাবিদ আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ ও ড্রেন নির্মাণ করবেন। এই প্রকল্পের জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা। তাঁর এই উদ্যোগ একা সীমাবদ্ধ থাকেনি। সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই অন্যান্য প্রবাসী ও স্থানীয় ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসেন।

শিওরখাল মাঝপাড়া রাস্তা প্রায় ১৪ফুট প্রস্থ ও ১৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তার মধ্যে ৩০০ ফুট ঢালাই ও ৫০০ফুট ড্রেন নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে পুরো রাস্তার কাজ শেষ হলে এটি হবে একটি আধুনিক, প্রশস্ত ও টেকসই রাস্তা—যেখানে বর্ষায় জলাবদ্ধতা থাকবে না, চলাচলের জন্য থাকবে পর্যাপ্ত সুবিধা।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রেজওয়ান আলী কয়েছ তাঁর পুত্র যুক্তরাজ্যপ্রবাসী তাহমিদ আলীকে নিয়ে মাঝপাড়ার রাস্তা পরিদর্শনে আসেন। শুধু রাস্তাই নয়, তাঁরা তাঁদের পারিবারিক উদ্যোগে নির্মাণাধীন এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার কাজও সরেজমিনে ঘুরে দেখেন।

এ সময় গ্রামের প্রবীণ ও যুবসমাজের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজী আব্দুল ওয়াহিদ, আব্দুর রউফ, নজির মিয়া, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাজ্জাদ আলী, মো. তখলিছ মিয়া,  জিলু মিয়া, আব্দুস শহীদ, এনাম আহমদ, চুমু মিয়া, ফয়সল আহমদ এবং বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি সাংবাদিক শাহ মো. হেলাল।

আলাপকালে উদ্যোক্তা রেজওয়ান আলী কয়েছ জানান—এটি শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি আমাদের গ্রামের মানুষের স্বপ্ন পূরণের পথে একটি মাইলফলক। আমরা আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই একটি রাস্তা নির্মাণ করতে চাই, যা আগামী প্রজন্মের জন্য দীর্ঘস্থায়ী সুবিধা নিশ্চিত করবে। 


এছাড়াও, রাতে নিরাপদ চলাচলের জন্য রাস্তায় লাইটিং ব্যবস্থাও  করা হবে।

শুধু রাস্তা নয়, শিওরখালে একটি আধুনিক এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এসব মানবিক প্রকল্প গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে।

এলাকাবাসী মনে করেন, রেজওয়ান আলী কয়েছ শুধু উন্নয়ন করছেন না, তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছেন এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর মতো আরও বিত্তবান ও সচেতন নাগরিকদেরও এ ধরনের সামাজিক কাজে এগিয়ে আসা উচিত, যাতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এবং গ্রামবাসীর জন্য একটি সুন্দর, নিরাপদ ও বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।

এই সম্পর্কিত আরো