সুবর্ণা হামিদ
আমার বাচ্চান্তরে তো আমি উপাস রাখতে পারতাম না, আমার বাচ্চাইন্তরে আমার চালানিওই লাগবো,আমার বাচ্চাইন্তর আমি ছাড়া আর কেউ নাই হে পালাইয়া গেছেগি আমি তো পারতাম না আমার হাত পাও আছে আমি চলিয়াফিরিয়া খাইতে পারমু...। কেঁদে কেঁদে চোখের জল মুছছে এ মনটা বলছিলেন মহিলা রিকশা চালক জরিনা।
জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে রিকশাকেই বেছে নিলেন তিন সন্তানের জননী জরিনা। আজ থেকে দশ বছর আগে, এক সময় সমাজে নারীদের বাহন চালনা শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য বলে মনে করা হতো, তখন নারীরা বাহিরে কাজ করবে বা রিকশা চালাবে এটা কল্পনাও করা যেতো না কিন্তু বতর্মান সমাজের নারীরা সব কিছু করতে পারে তার উদাহরণ হলেন সিলেটে জরিনা নামের এক নারী। এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে রিকশা চালানোর পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সিলেট শহরের তিনি প্রথম মহিলা রিকশা চালক। তাঁর জীবনযাত্রা শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সমাজে নারী ক্ষমতায়নের একটি শক্তিশালী প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সিলেট নগরীর শামীমাবাদের একটি কলোনীতে ১ রুমের একটি ভাড়া বাসায় ৩ ছেলে নিয়ে বসবাস করেন জরিনা বেগম। একটি খাট,একটি কাঠের বক্স এইটুকুই তার ছোট্ট ঘরের সম্বল।
জরিনা বেগম আগে গৃহিণী থাকলেও দুইমাস ধরে রিকসা চালিয়ে সন্তানদের নিয়ে টানাপোড়নে সংসার চালাচ্ছেন। স্বামী মাদকাসক্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে না থাকায় বাধ্য হয়ে সিলেট নগরীতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে জীবীকা নির্বাহ করে রিকশাচালক হিসেবে বেছে নিলেন নিজের পেশা।
এ ব্যাপারে জরিনার সাথে কথা বললে তিনি সবুজ সিলেটকে জানান - তিন সন্তান রেখে আমার স্বামী আমাদের ছেড়ে চলে যায় তার পর থেকে কোন রকম দিন আনি দিন খাই কিন্তু এভাবে ঘর ভাড়া দিয়ে আর বাকি খরচ চালানো সম্ভব হয় না। আমার বড় ছেলের বয়স ১২ বছর সে একটা দোকানে কাজ করে মাত্র তিন হাজার টাকা পায় তাতে তো আর চলে না। আমি আগে ইট ভাঙার কাজ করতাম কিন্তু চোখে সমস্যা হওয়া এখন ধার করে একটা রিকশা নিয়েছে কিন্তু এতে আমার ছেলেদের লজ্জা লাগে তাদেরকে মানুষ নানা কথা শুনায় কিন্তু কিচ্ছু করার নেই বাচ্চারা ছোট তারা চাইলেও তো সংসার চালাতে পারবে না।
তিন ছেলেকে লেখা পড়া শেখাতে চান জরিনা, মানুষের এসব কথাকে তুচ্ছ করে নিজের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন জরিনা । তিনি জানেন, রিকশা চালানো কেবল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, এটি তার নিজের মর্যাদা ও স্বাধীনতার প্রতীক। তাঁর কাছে প্রতিটি মাইলেই রয়েছে এক নতুন গল্প—একটি সংগ্রাম, একটি জয়।