সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সুনামগঞ্জ বালিজুরী ইউনিয়নের পুরান বারুঙ্কা বড় খলার বোরো ফসল রক্ষা বাঁধে নিয়মনীতি তোয়াক্কা করা হচ্ছে না,তৈরী করা বালু দিয়ে,শুধু তাই নয় বাঁধের পাশ থেকেই বালু উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ কাজ করছে পিআইসির নিয়োজিত শ্রমিকরা। তবে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত প্রকল্প বাস্তবয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পাওয়া যায়নি।
বাঁধে এমনি অভিযোগ জানিয়েছেন বাঁধের পাশে থাকা লোকজন। খবরটি শোনার পর তাহিরপুরের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মনির হোসেন বাঁধের কাজটি বন্ধ করেছেন। কিন্তু বালু সড়ানো হয়নি। বা সড়ানোর কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দায়িত্বশীল কতৃপক্ষ।
শুধু এই বাধেঁই নয় উপজেলার প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬ টি বাঁধে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। অনেক বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি,আর যে সকল বাঁধে কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো সঠিক ভাবে দুরমুজ করা হচ্ছে না। কোন রখমে মাটি ফেলে দায়সারা বাঁধ নির্মাণ কাজ করছে। এছাড়াও অনেক বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। অপরদিকে ৭ টি পিআইসি কমিটির সভাপতি বাঁধ নির্মাণ কাজ করতে পারবেন না বলে আবেদন করায় সচেতন মহল ও কৃষক পরিবারে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত ও নির্মাণকাজ কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ই ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু ও ২৮শে ফেব্রুয়ারি কাজ সম্পন্ন করার নিয়ম রয়েছে। আর ২৮শে ফ্রেরুয়ারীর মধ্যে শেষ করার কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী নিদের্শন রয়েছে। কাগজে কলমে সব সকটি বাঁধের উদ্বোধন দেকানো হলেও ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০টি বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। কাজ শুরু না করে কাজ করবে না বলে আবেদন করেছে ৭টি পিআইসি।
প্রতি বছরের মত এবারও প্রকৃত কৃষকগন বাঁধ রক্ষার কাজ পায়নি যার জন্য উৎবেগ আর উৎকন্ঠায় আছে কৃষকগন অভিযোগ তুলেছেন হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
হাওর পাড়ের কৃষক রফিক মিয়া,কামাল উদ্দিনসহ অনেকেই অভিযোগ করে জানান, ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত/নির্মাণ করতে প্রতি বছরেই একটি সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে উঠে যারা কৃষক না। কৃষকদের সামনে রেখে যাদের উদ্দেশ্যই পিআইসি বানিজ্য করে বাঁধ নির্মাণ/মেরামতে অনিয়ম করে টাকা হাতিয়ে নেয়া। সেই সব লোকজন পিআইসি নিয়েই তালবাহানা শুরু করে আর বাঁধেও খুঁজে পাওয়া যায় না এবারও তাই হয়েছে। চুক্তিতে অ্যাক্সকেভেটর মালিকদের (মাটি কাটার লোক জনের কাছে)কাছে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে বাঁধের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়। আর আগাম বন্যায় আতংকে থাকতে হয় কষ্টে ফলানো ফসল নিয়ে হাওর পাড়ের লাখ লাখ কৃষকগন কে।
পুরান বারুঙ্কা বড় খলা বাঁধের পাশের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন, আব্দুল মুমিন জানান, বালু দিয়ে বাধঁ করায় বৃষ্টির পানিতেই এই বাঁধ ভেঙে যাবে পাহাড়ি ঢলের পানি আসার আগেই। সেই সাথে বাঁধের পাশেই আমার বাড়িও ভেঙে যাবে। প্রতি বছর মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করেও টিকানো কষ্ট হয়। আর এখন বালু দিয়ে বাঁধ কিভাবে ঠিকবে।
এসময় ওয়ার্ড মেম্বার আজিজ মিয়া জানান,বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বালুর বাঁধ হলেও কৃষকদের কোনো লাভ হবে না। পানি আসলেই ভেঙে হাজার হাজার কৃষকের কষ্টে ফলানো বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাবে, কষ্টের শেষ থাকবে না কৃষকদের।
বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জমিরুল হক জানান,বালু মিশ্রিত মাটি। আর বাঁধের কাছ থেকে নয় নির্দিষ্ট দুরত্ব থেকে বালু মিশ্রিত মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছিল। তবে আজকে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এসও সাহেবের বলায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুরের দায়িত্বে থাকা এসও মনির হোসেন জানান,বালু দিয়ে বাধঁ নির্মানের খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করা হয়েছে। বালু না সড়ানো পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে। বালু সড়িয়ে নতুন করে মাটি দিতে হবে। এই প্রকল্পে প্রায় ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বালু দিয়ে তৈরি বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান,এই বিষয়ে প্রয়োজন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর বাঁধ নির্মাণ কাজ দেরী হওয়ার কারন হিসাবে তিনি জানান,হাওরে পানি থাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাঁধের কাজ শুরু করতে দেরী হচ্ছে। এ কারনে কয়েকটি পিআইসি কাজ করতে পারবে না বলে আবেদন করেছে। তাদের বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে।