জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মর্তুজা সেলিম বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দিতে শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং নাগরিকদের সাথে চেতনার নামে তামাশায় মত্ত ছিল। তবে, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লব নাগরিকের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই আজ আমরা চা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এ ভালোবাসার বিনিময় আমাদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, এবং সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেয়।”
এসময় আরও বলেন, “জাতীয় নাগরিক কমিটি চায় মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করতে এবং উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ মুক্ত একটি সমাজ গড়ে তুলতে। এসব উদ্যোগ শুধু ব্যক্তিগত বা সংগঠনের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে হবে।”
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকাল ৩ টায় সিলেট নগরীর লাক্কাতুরা ও মালনিছড়া চা বাগানে শীতার্ত চা শ্রমিকদের মাঝে ২শ কম্বল বিতরণ অনুষ্টানে তিনি এসব কথা বলেন।
শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচীর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শীতকালীন মৌলিক চাহিদা পূরণ, শীতবস্ত্রের মাধ্যমে শীতার্তদের উষ্ণতা নিশ্চিত করা এবং সমাজে সহানুভূতি ও মানবিকতা প্রচার করা। যার মাধ্যমে তাদের শীতকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটি সিলেট জেলার সংগঠক এবং সিটিজেন রাইটস এন্ড জাস্টিস নেটওয়ার্কের কো-ফাউন্ডার আজহার উদ্দিন খান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সিলেট জেলার সংগঠক ফয়সল আহমেদ ও আব্দুর রহিম, মহানগর সংগঠক জহিরুল ইসলাম ও রেজাউল করিম, সিলেট বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ মহসিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) সমন্বয়কবৃন্দ।
বক্তারা আরও বলেন, “চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে শুধু শীতবস্ত্র বিতরণ নয়, তাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিলে এই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী সমাজে আরও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবে।”
অনুষ্ঠানে চা শ্রমিকরা জাতীয় নাগরিক কমিটির এই উদ্যোগকে গভীরভাবে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এক শ্রমিক বলেন, “এভাবে আগে কেউ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। জাতীয় নাগরিক কমিটি যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে, তা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের কথা ভেবেছে, আমাদের জন্য কাজ করেছে—এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।”
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আল হোসেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির এই উদ্যোগ স্থানীয় চা শ্রমিকদের মাঝে আশার আলো ছড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবিক কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।