নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশি কার্যক্রমে বাধা প্রদানের পাশাপাশি ওসির বিরুদ্ধে চাঁদা দাবীর মিথ্যা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
আলোচনায় রয়েছে ইউপি সদস্য আজিম উদ্দিনের রাজনৈতিক ডিগবাজিও। ১৫ বছর আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় থাকলে বর্তমানে নিজেকে বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন আলোচিত এই আঝিম উদ্দিন। এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে পক্ষে বিপক্ষে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইউপি সদস্য আজিম উদ্দিনের বাড়িতে দুই পলাতক আসামীকে ধরতে অভিযান চালায় নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। এসময় ওসি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তাকে ডাকাডাকি করেন। এ সময় তার ভাই ইসলাম উদ্দিন ঘরের গেইটের তালা না খুলেই ওসির সাথে কথা বলেন। তাৎক্ষনিক আজিম উদ্দিন তার লোকজন দিয়ে তার বাড়িতে ডাকাত এসেছে মর্মে এলাকার প্রতিটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা করেন। যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। মাইকিংয়ের খবর পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমেদ জিহাদীসহ স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় পুলিশের কাজ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে গত বুধবার (১৫ জানুয়ারী) নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য মো. আজিম উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন পিপিএম এর বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলেন। টাকা না দিলে তাকে নাইন মার্ডার মামলায় ফাঁসানো হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
তবে, সাংবাদিকরা ওসির বিরুদ্ধে এ অভিযোগের পক্ষে কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ বা তথ্য-উপাত্ত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোন প্রমান উপস্থাপন করতে পারেননি।
এ নিয়ে সচেতন মহলের ভাষ্য, একজন ওসির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। কিন্তু অভিযোগকারী যদি প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারেন, তাহলে সেটি স্রেফ ভিত্তিহীন প্রচারণা বলে মনে হবে।
এদিকে রাজনীতিতে তার ডিগবাজি নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। একসময় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি এখন নিজেকে বিএনপির কর্মী বলে দাবি করছেন। তবে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা তার এই অবস্থানকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেছেন, যা রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিএনপির ইনাতগঞ্জ শাখার নেতারা একযোগে আজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
সিনিয়র সভাপতি আবুল কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহবুব আলম ও সদস্য আব্দুল হাফিজ লুলুসহ স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা তাদের ফেসবুক পোস্টে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, “আজিম উদ্দিন বিএনপির কেউ নয়। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন এবং দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপির কোনো কর্মকান্ডে অংশ নেননি। এখন ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিএনপিতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
তারা আরও উল্লেখ করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা হাইব্রিড ও সুবিধাবাদীদের দলে ঠাঁই নেই। ইনাতগঞ্জ বিএনপি এই ধরনের অপচেষ্টাকে বরাবরই বর্জন করেছে এবং করবে। এছাড়া যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুর রহমানও ফেসবুকে লিখেছেন যে, আজিম উদ্দিনের বিএনপির সাথে কোন সম্পর্ক নেই সে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা।
ইনাতগঞ্জ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল আহমেদ সুমন আজিম উদ্দিনের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ২০০৯ সালে আজিম উদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগদান করেছিলেন। নবীগঞ্জে তার যোগদান অনুষ্ঠানে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলুসহ আরও অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে তার এ ধরনের চরিত্র বদল দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আজিম উদ্দিনের বর্তমান অবস্থান নিয়ে ইনাতগঞ্জ বিএনপি তার প্রবেশে সাফ ‘না’ বলেছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারাও তার সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে হতাশ।
আলোচিত আজিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমি সব সময়ই বিএনপির সাথে ছিলাম এখনও আছি। আমাকে নিয়ে এখন নানা রকম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন পিপিএম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, আজিম মেম্বারের বাড়িতে দুজন পলাতক আসামী অবস্থান করছে এমন খবরে তার বাড়িতে আসামী গ্রেফতার করতে গেলে তিনি পুলিশকে সহযোগিতা না করে বাঁধা প্রদান করে যে কান্ড ঘটালেন তা খুবই দু:খজনক।
তিনি বলেন, মসজিদের মাইকে খবর পেয়ে ওই বাড়িতে অনেক লোক চলে আসেন। এছাড়া আজিম উদ্দিন মেম্বারের সাথে আমার দেখা বা কোন কথাই হয়নি। আমি ওই বাড়ি থেকে চলে আসার সময় নারী পুরুষ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ের ধারনকৃত ভিডিও আমার কাছে রয়েছে। কাজেই চাদাঁ আদায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।