সুবর্ণা হামিদ
স্থায়ী আবাসন চায় সিলেটের তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ । হিজড়া জনগোষ্ঠীর লোকজন সাধারণত সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকে। কারণ- এই জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের সমাজে বৈষম্য ও নিগ্রহের শিকার। ফলে সামাজিক ভাবে তাদের কোন ভালো অবস্থান না থাকায় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ে আবাসন নিয়ে। উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি কোথাও তাদের ভালোভাবে ঠাই হয়না। সবাই ভিন্ন চোখে দেখায় এই সংকটে পড়ে তারা। এ কারণে নিজেদের জন্য স্থায়ী আবাসস্থল এই জনগোষ্ঠীর একটি প্রধান দাবি।
দেশের কিছু জায়গায় হিজড়া জনগোষ্ঠী নিজস্ব সম্প্রদায় হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করে, যেগুলো "হিজড়া কলোনি" বা "হিজড়া পল্লী" নামে পরিচিত। কিন্তু সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বসবাসের জন্য এ ধরনের স্থায়ী এবং সুনির্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই, যে কারণে তাঁরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় দলবদ্ধভাবে বসবাস করেন। কেউ কেউ আবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তবে অনেক সময় তারা স্থানান্তরিত হন এবং তাদের জন্য কোন নির্দিষ্ট আশ্রয়স্থল বা সমাজের স্বীকৃত স্থান থাকে না।
এ ধরনের জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বা স্থায়ী আশ্রয়স্থল তৈরি করা হয়নি। ফলে, এই জনগোষ্ঠী সমাজের প্রধানধারার মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে জীবনযাপন করেন, যা তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া মৌলিক চাহিদা মেটাতে না পারায় নানা অপরাধ, অপকর্মের সাথে জড়িয়ে থাকতে হয় অনেককে।
হিজড়া জনগোষ্ঠী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের আবাসন পরিস্থিতি সাধারণত অনেক চ্যালেঞ্জপূর্ণ। সিলেটের হিজড়াদের জন্য বিশেষ কোন সরকারি আবাসন ব্যবস্থা নেই এবং তারা সমাজে মার্জিতভাবে বসবাস করতে পারে না।বেশিরভাগ হিজড়া লোকজন শহর বা গ্রামাঞ্চলে ভাড়াবাড়িতে থাকেন, কিন্তু তাদের আবাসন পরিস্থিতি প্রায়ই অস্থির, নিরাপত্তাহীন এবং অনেক সময় তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এর ফলে তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়।
এ ব্যাপারে সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠীর সাথে কথা বললে হিজড়া যুব কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সুপ্তা হিজড়া সবুজ সিলেটকে বলেন-সিলেটে আমাদের জনগোষ্ঠীর মানুষকে খুব অসহায় ভাবে বসবাস করতে হচ্ছে আমি কয়েক বছর ধরে কদমতলীর একটা বিল্ডিং এ ভাড়া থাকতাম। কিন্তু গত দু'মাস আগে আমাকে বলা হয়েছে বাসা ছেড়ে দিতে, তারা নাকি এই বিল্ডিং বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু পরে জানতে পারি ঐ বিল্ডিং বিক্রি হয় নাই, তারা আমাদেরকে তাড়ানোর জন্য এই রকম বলছে। শুধু তাই নয়, নতুন বাসা নিতে হলেও আমাদের অনেক সমস্যা হয়; কারণ আমরা হিজড়া জানলে কেউ ভাড়া দিতে চায় না। এই রকম অবস্থা হলে আমরা কোথায় যাবো ? এমনিতেই তো আমরা পরিবার ছাড়া, সমাজ ছাড়া, তাহলে আমাদের স্থান কোথায় ? আমরাও তো মানুষ, আমাদের মৌলিক চাহিদা গুলো যদি আমরা না পাই; তাহলে আর কি বলবো? তিনি আরো বলেন - আমরা গত বছর সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবর একটা লিখিত আবেদন করেছিলাম কিন্তু কোন সুরাহা হয় নি।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সবুজ সিলেটকে জানান - সিলেটের তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন নিয়ে আমরা গত ৮ জানুয়ারি একটি সভার আয়োজন করি। সভায় তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা উঠে আসে, এর মধ্যে একটি হলো তাদের স্থায়ী আবাসন। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করা অনেকটা কঠিন, তার পরও সভায় আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি যার মাধ্যমে সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
সিলেট জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক আব্দুর রফিক বলেন - আমরা সিলেটের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করে থাকি, কিন্তু তাদের সব মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করার সাধ্য আমাদের নেই। গত ৮ তারিখের সভার মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষের সাথে মতবিনিময় করে, হিজড়া জনগোষ্ঠীর সমস্যা, প্রয়োজন এবং চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি একটা ভালো ফলাফল আসতে পারে।