সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলাধীন ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রদলে চরম উত্তেজনা ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতাদের দাবি— ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির খুনির ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা এবং দলীয় নেতাদের চোরাচালানে সহযোগিতা না করায় তাদের এই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এদিকে, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ঝটিকা মিছিল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদেলর দপ্তর সম্পাদক এম. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সুয়েব আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জামাল আহমদ সবুজকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবং সিলেট-০৪ আসনের সংসদ নির্বাচনে পদপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাফিজ, সিলেট জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনারের নির্দেশে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বদরুল আলম শাওন ও সদস্য সচিব (ভারপ্রাপ্ত) শাহীন আলম এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। একই আদেশে ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তাজুল ইসলামকে সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বুরহান আহমদ রাজুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি সুয়েব আহমদের দাবি, গত পরশু জুলাই বিপ্লবের লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির খুনির বিচারের দাবিতে তারা মিছিল করেছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির নিজে হাদির জন্য শোক প্রকাশ ও মিছিল করেছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ তাঁর জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, সেখানে একই দাবিতে মিছিল করে আমরা কেন বহিষ্কার হলাম?
সুয়েব তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন— আলহামদুলিল্লাহ, গত পরশু শহীদ ওসমান হাদির খুনির ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল দেওয়ায় আজ ছাত্রদলের পদ থেকে বহিষ্কার আদেশ হাতে পেলাম। দল করার কারণে প্রায় এক ডজন মামলা ও ২ মাস ২১ দিন কারাবরণ, দলকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, দলের কাজ করা কি আমার অপরাধ?
সুয়েব আহমদ আরও গুরুতর অভিযোগ তুলে বলেন, আমাদের বহিষ্কারের মূল কারণ ভিন্ন। ৫ আগস্টের পর থেকে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব এম শাহীন আলম ও জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা আমাদের চোরাচালানে সহযোগিতার জন্য বারবার প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তাদের অনৈতিক কাজে সায় না দেওয়া এবং শহীদ হাদির মিছিল করাই আমাদের জন্য কাল হয়েছে।
এই বহিষ্কারের খবর ছড়িয়ে পড়লে ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে নেতাকর্মীরা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব এম শাহীন আলমের বিরুদ্ধে তীব্র স্লোগান দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এই সিদ্ধান্তকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বহিষ্কৃত নেতাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব এম শাহীন আলম মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার বলেন, ফেসবুকে বিষয়টি দেখেছি। জরুরি কাজে সিলেটের বাহিরে আছি।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও রাজপথের কর্মীদের এভাবে বিতর্কিত উপায়ে বহিষ্কার করা হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।