সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন চাঁনপুর এলাকায় প্রবাসীদের বিনিয়োগকৃত একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অজ্ঞাতনামা ‘আগুন সন্ত্রাসীদের’ দেওয়া এই আগুনে ‘ক্যাফে লেমন গার্ডেন ও মুসকান নার্সারী’ নামক প্রতিষ্ঠানটির দুটি ঘরসহ বিপুল পরিমাণ আসবাবপত্র ও মূল্যবান চারাগাছ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে ১১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা থেকে ১২ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার মধ্যবর্তী সময়ে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ওহিদ উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে জালালাবাদ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে ঘটনার বেশ কয়েক দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মামলা রেকর্ড না হওয়ায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জালালাবাদ থানার মোগলগাঁও এলাকার বাসিন্দা ওহিদ উদ্দিন ও তাঁর প্রবাসী ব্যবসায়িক অংশীদাররা মিলে চাঁনপুর এলাকায় ‘ক্যাফে লেমন গার্ডেন ও মুসকান নার্সারী’ গড়ে তোলেন। ১১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শেষে তাঁরা প্রতিষ্ঠানটি তালাবদ্ধ করে বাড়িতে চলে যান। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী আল আমিন হোসেন হঠাৎ আগুন দেখতে পেয়ে মালিকপক্ষকে খবর দেন। খবর পেয়ে উদ্যোক্তারা ও স্থানীয়রা মিলে প্রায় ঘণ্টাখানেক চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে ক্যাফের দুটি ঘর এবং নার্সারীর মূল্যবান সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ক্যাফে লেমন গার্ডেন ও মুসকান নার্সারীর স্বত্বাধিকারী প্রবাসী আফজাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা গত ১২ ডিসেম্বর জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি এবং পরবর্তীতে ১৫ ডিসেম্বর অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেই। ঘটনার দিন ওসি সাহেব নিজে এসে তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনো পর্যন্ত মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি। এর ফলে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি এবং আবারও নাশকতার আতঙ্কে ভুগছি। তিনি অবিলম্বে মামলা রেকর্ড করে আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটি নেতা ও প্রতিষ্ঠানের ভূমির স্বত্বাধিকারী কয়েছ আহমদ ফয়েজ বলেন, আমরা রেমিট্যান্সযোদ্ধা। প্রবাস থেকে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে আমরা বিদেশের মাটিতে বিনিয়োগ না করে নিজ দেশে করেছি। কিন্তু আমাদের সেই তিল তিল করে গড়া স্বপ্ন ভেঙে দিতে একটি কুচক্রী মহল এই জঘন্য অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। আমি পুলিশ কমিশনার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আকুতি জানাচ্ছি—প্রবাসীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন এবং এই ‘আগুন সন্ত্রাসীদের’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্যাফে লেমন গার্ডেন ও নার্সারীতে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, জনবহুল এলাকায় এমন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী দ্রুত এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা হোতাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।