সিলেট মহানগর তাঁতীদলের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দলটির একাংশের অভিযোগ, বিগত আন্দোলনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী দোসর’ ও যুবলীগ নেতার সহযোগীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। অবিলম্বে এই বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি পুনর্গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান মহানগর তাঁতীদলের পদবঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট মহানগর তাঁতীদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ উল কয়েস।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর আব্দুল গফ্ফারকে সভাপতি ও ফয়েজুল কয়েসকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট মহানগর তাঁতীদলের কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই থেকে এই কমিটি বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে রাজপথে সোচ্চার ছিল। কমিটির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হয়ে কারাবরণ করেছেন এবং দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
ফয়েজ উল কয়েস অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে আমরা যখন সিলেট-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়, ঠিক তখনই গত ৮ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানগর তাঁতীদলের ৬৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি নতুন আহ্বায়ক কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ‘স্থবিরতা ও অবহেলা’র অজুহাত দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
নতুন কমিটির আহ্বায়কের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কয়েস আহমদকে, যিনি একজন চিহ্নিত আওয়ামী দোসর। তার বিরুদ্ধে বিগত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরোধিতার অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের ত্যাগের প্রতি তিরস্কারের শামিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত নেতারা আরও জানান, ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক কয়েস আহমদ শুধু আওয়ামী লীগের দোসরই নন, তিনি যুবলীগ ক্যাডার জাহাঙ্গীর আলমের ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত। সব প্রমাণ থাকার পরও এমন একজনকে নেতা বানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি বহাল থাকা অবস্থায় কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনৈক ফয়েজ আহমদ দৌলতের মাধ্যমে এই পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আহ্বায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফয়েজ আহমদ দৌলতের কাছ থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া নতুন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জসীম উদ্দিন আগের কমিটিতে থাকলেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন এবং সদস্যসচিব করা হয়েছে আমিনুল হক বেলালকে।
নেতৃবৃন্দ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সিলেট-১ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি স্থগিতের দাবি জানান। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর তাঁতীদলের সদ্য সাবেক সভাপতি আব্দুল গফ্ফার, সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হাদ বকস রাক্কু, সহ-সভাপতি তাজ উদ্দিন লিলু, ২৩নং ওয়ার্ড তাঁতীদলের সভাপতি মো. মোজাহের আলী, ৭নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক মো. জালাল উদ্দিন, ১৯নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক এনাম খান, ১২নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক হানিফ আহমদ প্রমুখ।