শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

কুলাউড়ায় আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে একাধিক কৃষকের মালিকানাধীন কৃষি জমিতে পেশীশক্তির জোরে ফসল রোপণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর এলাকায় মনু নদীর চর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কৃষকদের পক্ষে স্থানীয় সাধনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দুই নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে জড়িত ৯ জনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে কয়েকজন নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে গত ৩০ অক্টোবর অবৈধভাবে বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে কৃষকদের পক্ষে একটি লিখিত আবেদন করেন মুহিবুর রহমান।

স্থানীয় এলাকা সূত্রে ও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামে বাড়উগাঁও মৌজায় খতিয়ান নং-৫২৩, দাগ নং-১০৩১, ১০৩২, ১০৩৩, ১০৩৪, ১০৪৪, ১০৪৮, ১০৪৯, ১০৫৪ দাগে সাইল রকম দুই একর ভূমি সাধনপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, আব্দুল বাছিত বাচ্চু, সাইফুল ইসলাম, শফিক মিয়া, লিয়াকত আলী, আব্দুল মন্নান, আব্দুল গফুর, আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল হান্নান, আব্দুর রশীদ, আব্দুস শহীদ, জুয়েল মিয়া, জয়নাল মিয়া, আকমল হোসেন, জাকির হোসেন, আব্দুল আজিজ, ফয়সল মিয়া গংদের মৌরশী সম্পত্তি। ওই জমিতে হরিচক গ্রামের বাসিন্দা, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান নেতৃত্বে তার সহযোগী ছব্দর আলী, আব্দুর রশীদ, আব্দুস সালাম সুরুজ, হামিদুর রহমান, মুহিবুর আলী, ইসমাইল মিয়া ও সাধনপুরের শাহিন মিয়া গত ২৬ নভেম্বর তপশীল বর্ণিত ভূমিতে অনাধিকার প্রবেশ করে জোরপূর্বক ফসল আলু, সরিষা, ডাল রোপণ করে। এ ঘটনায় ছব্দর আলীকে প্রধান করে ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী কৃষক মুহিবুর রহমান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। এরআগে গত ১৫ মার্চ সকালে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর এলাকায় কৃষক মুহিবুর রহমান গংয়ের কৃষি জমিতে আদালত কর্তৃক জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে প্রায় কয়েক লক্ষাধিক টাকার ফসল (আলু) তুলে নিয়ে যায় বিবাদী ছব্দর আলী ও ফজলুর রহমান গং।

এর আগে জমি দখলের অভিযোগ এনে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কৃষক মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে ফজলুর রহমান গংয়ের ৬ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা (নং-৪৯/২০২৫) দায়ের করেন। ওই মামলার পর উভয়পক্ষকে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কুলাউড়া থানার এসআই মো. মুহিত মিয়া ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করেন। পরবর্তীতে বিবাদী পক্ষ ছব্দর আলী ও ফজলুর রহমান গংয়ের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে গত ১৯ মে প্রতিবেদন দাখিল করেন থানার এসআই মুহিত মিয়া। এরপর গত ২৪ আগস্ট বিজ্ঞ আদালত তপশীল বর্ণিত ভূমি মুহিবুর রহমান গংয়ের দখলে থাকায় এবং কুলাউড়া থানার প্রতিবেদন অনুযায়ী শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকায় বিরোধপূর্ণ ভূমিতে বিবাদী পক্ষ ফজলুর রহমান ও ছব্দর আলী গংয়ের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। কিন্তু পুনরায় বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২৬ নভেম্বর মুহিবুর রহমান গংয়ের রেকর্ডীয় মালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে হালচাষ করে ফসল রোপণ করে বিবাদী ফজলুর রহমান ও ছব্দর আলী গং। এতে বাঁধা দিলে বিবাদীরা মুহিবুর রহমান গংদের কথায় কর্ণপাত না করে তাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মুহিবুর রহমান গংকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ছব্দর আলী ও ফজলুর রহমান গং।

সাধনপুর গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, সোহেল মিয়া বলেন, প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের দোসর ফজলুর রহমান ও ছব্দর আলী গং আমাদের মৌরসী জমি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমাদের রেকর্ডীয় জমিতে প্রতিবছর আমরা আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করি জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বিবাদীরা এরআগেও আমাদের জমি থেকে জোরপূর্বক কয়েক লক্ষ টাকার ফসল তুলে নিয়ে যায়। আমরা আদালতে ও থানায় মামলা দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত থেকে আমাদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু বিবাদীরা পুনরায় পেশী শক্তির জোরে আমাদের জমিতে আলুসহ বিভিন্ন ফসল রোপণ করেছে। আমরা প্রতিকার চেয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।

অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফজলুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন যারা ফসল রোপণ করেছে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। বিরোধপূর্ণ জমিতে আপনাদের কোন স্বত্ত্ব আছে কিনা এবং আদালতের রায় অমান্য করে কেন ওই জমিতে প্রবেশ করে ফসল রোপণ করা হলো প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুহিবুর  রহমান গং মিথ্যা মামলা করা হয়েছে আমাদের ওপর। আমরা তাদের জমিতে ফসল রোপণ করিনি। আমার অপরাধ আমি আওয়ামীলীগ করি।

অভিযোগের বিষয়ে ছব্দর আলী বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব ও কিছু খাস জমিতে ফসল রোপণ করেছি। বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলছে। অতীতে স্থানীয় এলাকার লোকদের নিয়ে সালিশি বৈঠক হলে আমরা মুহিবুর রহমান গংয়ের জমি ছেড়ে দিয়েছি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এএসআই মো. ইমদাদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের সত্যতা মিলেছে।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর ফারুক বলেন, আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই সম্পর্কিত আরো