জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এরই মধ্যে নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার–গোলাপগঞ্জ) আসনে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতায় গোলাপগঞ্জের চেয়ে বিয়ানীবাজারের রাজনৈতিক মাঠ এখন অনেক বেশি সরগরম। আসন্ন নির্বাচনে এই আসনে মূলত হাইপ্রোফাইল ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভোটের সমীকরণে নতুন মোড় নিচ্ছে।
সিলেট-৬ আসনে লড়াইয়ের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিন হেভিওয়েট প্রার্থী— সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় প্রার্থী এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, এবং জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী ফখরুল ইসলাম। দুই উপজেলাজুড়ে এই তিন প্রার্থীর প্রচারণা ও গণসংযোগ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বিয়ানীবাজারে তাদের শক্তির মহড়া ও জনসম্পৃক্ততা নির্বাচনের মাঠকে উত্তপ্ত করে রেখেছে।
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর নাম ঘোষণার পর থেকেই বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপিতে বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। ফয়সল চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন একটি বড় অংশ সরাসরি এমরান আহমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতিবাচক ভূমিকা, যা স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপির প্রচারণায় সাময়িক অস্থিরতা দেখা দিলেও সাধারণ কর্মী ও তৃণমূল সমর্থকদের উপস্থিতি মাঠে ক্রমশ বাড়ছে।
এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, “অভ্যন্তরীণ কিছু বিভ্রান্তি আছে, তবে আমরা তা সমাধানের পথে এগোচ্ছি। কর্মীরা উদ্যমী—বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।”
মাঠের রাজনীতিতে অত্যন্ত সুসংগঠিত অবস্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বিয়ানীবাজারে শক্তিশালী তৃণমূল নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে ব্যাপক জনসংযোগ করছেন। বিশাল জনসমাবেশ, রোডমার্চ এবং গ্রামাঞ্চলে ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে জামায়াত তাদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দিচ্ছে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষের দোরগোড়ায় যাচ্ছি। বিয়ানীবাজারে আমাদের তৃণমূল সংগঠন অত্যন্ত সক্রিয়। জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে আছে—এটা প্রতিদিনই বুঝতে পারছি।”
অন্যদিকে, জমিয়ত প্রার্থী ফখরুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসা ও আলেমসমাজের বিশাল নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে প্রচারণায় গতি এনেছেন। তিনি বলেন, “মানুষের সেবাকে প্রাধান্য দিয়েই মাঠে নেমেছি। দুই উপজেলাতেই প্রচারণার ভালো সাড়া পাচ্ছি। জনগণের ভালোবাসাই আমার শক্তি।”
প্রধান তিন দলের বাইরেও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আরও দুই সম্ভাব্য প্রার্থী। গণঅধিকার পরিষদের স্থানীয় নেতা জাহিদ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে যুবসমাজকে সাথে নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শাহরিয়ার ইমন সানি। আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকায় তরুণ ভোটারদের মাঝে তার একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সিলেট-৬ আসনের সমীকরণ তত জটিল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গোলাপগঞ্জের তুলনায় বিয়ানীবাজারের উত্তপ্ত মাঠ এবং বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর সক্ষমতা ভোটের ফলাফলে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। ত্রিমুখী এই লড়াই শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।