সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে পানিতে ডুবে থাকা মজাপুকুরে ভাসমান বেডে সবজি চাষে সফলতা পেয়েছে মুসলিমা আক্তার। উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের ছেলাইয়া গ্রামের বাড়ির পাশে মজাপুকুরটি সারা বছর ডুবে থাকে। এই পুকুরে ভাসমান কচুরিপানার উপর বেড তৈরি করে মাটি ছাড়াই চাষ করা হচ্ছে সবজি। ভাসমান বেডে সবজি চাষে খরচ কম আয় বেশি হওয়ায় স্বাবলম্বী মুসলিমা।
বেসরকারি সংস্থা কারিতাস (ইএলএসআরপি) প্রকল্পের আওতায় ভাসমান বেডে সফলতার মুখ দেখছে মুসলিমা আক্তার। ভাসমান বেডে সবজি চাষ উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কারিতাস। বেডে সবজি চাষ কৃষকদের মাঝে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রথম অবস্থায় কৃষাণী মুসলিমা সন্দিহান থাকলেও পরিক্ষামূলক চাষে সফলতার কারণে এই চাষে উৎসাহ দেখা দিয়েছে উপজেলার কৃষাণীদের। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সাথে রাস্তার পাশেই ডুবা। এই ডুবায় সবজি চাষ করা হয়েছে। পরপর তিনটি বেড, তাতে কলমি শাক, পুই শাক, লাল শাক চাষ করা হয়েছে। কচুরিপানা পচিয়ে বেড তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি বেডে বীজ ছিটিয়ে দেওয়ায় সবজির চারা গজিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় বিল, ডোবাগুলো বর্ষাকাল ছাড়াও সারা বছর পানিতে ডুবে থাকে। তাই এখানে সারা বছরেই বেডে সবজি চাষ করা সম্ভব। এবছর ভীমখালী ইউনিয়নে বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের উদ্যোগে একজন নারী কৃষাণী মুসলিমা আক্তার বেডে সবজি চাষ করেছে। প্রকল্পটি সফল হলে আগামীতে অনেকেই বেডে সবজি চাষে আগ্রহী হবেন।
বেডে সবজি চাষী মুসলিমা আক্তার জানান, কারিতাস সংস্থার জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা স্বপন নায়েক এসে বাড়ির পাশে ডোবায় সবজি চাষ করতে বলেন। তার নির্দেশে তিনটি বেডে সবজি চাষ করেছি। একটি বেডে লাল শাক, একটি বেডে কলমি শাক আরেকটি বেডে পুই শাক আবাদ করি। এমন চাষের অভিজ্ঞতা এই প্রথম। বেডে একবার সবজি চাষ করে বিক্রি করেছি তিনশত টাকা। আবার বীজ বপন করেছি। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে চারা উঠতে শুরু করবে৷ ২০ থেকে ২৫ দিন পর আবার সবজি বিক্রি করতে পারবো।
এভাবেই সারা বছর প্রতি মাসেই শাক বিক্রি করা যাবে। প্রথম প্রথম বেডে সবজি চাষ স্বপ্ন মনে হয়েছিল, এখন ভাল লাগছে। আমার এই বেডে সবজি চাষ প্রতিদিন লোকজন এসে দেখে যায়। তারাও আগামীতে বেডে সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শুধু বেডে সবজি চাষেই নয়, আমার চারদিকে বস্তায় আদা, হলুদ, টমেটো, মরিচ, পেপে, মুলা, পেয়াজ, নাগামরিচ, লেবু, লাউ, শিম, এলাচি সহ প্রায় ৮০ টি বস্তায় সবজি চাষ করা হয়েছে। এসমস্ত বীজ এবং প্রশিক্ষণ কারিতাস সংস্থা করে দিয়েছে। আমার সংসারে কোন সবজি আর বাজার থেকে কিনতে হয় না। নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রয় করে মাসে ২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
বেডে সবজি চাষ দেখতে আসা লালচাঁন বেগম জানান, মুসলিমা আক্তারের পানিতে সবজি চাষ দেখে ভাল লাগলো। আগামীতে আমি আমার বাড়ির পাশে বেডে সবজি চাষ করবো। উপজেলা কারিতাসের জুনিয়র কর্মসূচি কর্মকর্তা স্বপন নায়েক জানান, বেডে সবজি চাষের (ইএলএসআরপি) প্রকল্পের আওতায় এটাই প্রথম করা হয়েছে। এতে সফলতা পেলে আরো বৃদ্ধি করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার নারী কৃষাণীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শাক সবজির বীজ বিভিন্ন ধরণের ফল - মূলের চারা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এতে করে নারীরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কায়সার আহমদ জানান, সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কৃষকদের মানোন্নয়নে এগিয়ে আসছে। তারেই ধারাবাহিকতায় উপজেলায় কারিতাস সংস্থা স্থানীয় কৃষাণীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষি কাজে সহায়তা করে আসছে। এই সংস্থাটি প্রথম ভাসমান বেডে সবজি আবাদ করছে। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।