প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে জোরেশোরে। নির্বাচন কমিশন তফসিল ও ভোটের তারিখ ঘোষণা করলেও, এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখনো তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। ফলে ধানের শীষের প্রতীক পেতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ এবং অভ্যন্তরীণ স্নায়ুযুদ্ধে নির্বাচনী উত্তাপ এখন তুঙ্গে।
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দীর্ঘ তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। এছাড়াও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতা হেলাল উদ্দিন এবং সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।
মাঠ পর্যায়ের জরিপে দেখা গেছে, অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান ও তার অনুসারীরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। তারেক রহমানের ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ বাস্তবায়নে তারা তিন উপজেলার ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অ্যাডভোকেট জামান মনোনয়ন পেলেও দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এবং প্রয়াত এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের সম্মানে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। সীমান্ত জনপদের সাধারণ ভোটার ও কর্মীদের প্রত্যাশা, ত্যাগের মূল্যায়ন হিসেবে এবার তিনিই চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন। সিলেট শহরের রাজনীতিতেও তাকে একজন প্রভাবশালী ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অন্যদিকে, সাবেক সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট-১ আসন থেকে মনোনয়ন না পেয়ে হঠাৎ করেই সিলেট-৪ আসনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন তিনি। তার এই ‘স্বঘোষিত’ প্রার্থিতা নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আবদুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিনের সমর্থকরা এই দাবির প্রতিবাদে মশাল মিছিল বের করেছেন, যা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে প্রকাশ্যে এনেছে।
মাঠের রাজনীতিতে পিছিয়ে নেই অন্যরাও। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী তার সমর্থকদের নিয়ে ৩১ দফার প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম নিজের শক্তি প্রদর্শনে তিন উপজেলায় শোডাউন, সভা ও সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে আরিফুল হক চৌধুরী নিজেকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় এবং আবদুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিন মশাল মিছিল বের করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, আরিফুল হক এবং আবদুল হাকিম চৌধুরী, হেলাল উদ্দিনের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও মশাল মিছিল দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। তবে তৃণমূলের দাবি, দল থেকে যাকে চূড়ান্তভাবে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হবে, তার পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।
প্রার্থী ঘোষণা প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, এখনো পর্যন্ত সিলেট-৪ আসনে কাউকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে দল ঘোষণা করেনি। সকল প্রার্থীই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ নিজেকে ‘মনোনীত’ বলে প্রচার করলে দায়ভার তার নিজের।
বিএনপির অফিসিয়াল পেজে আরিফুল হককে নিয়ে প্রচারিত কথিত ভিডিও সম্পর্কে তিনি বলেন, মনোনীত বলে কোনো ভিডিও আপলোড হয়নি, আপনারা পেজ চেক করলেই সত্যতা পাবেন।
বিএনপির এই মনোনয়ন যুদ্ধের মাঝেই অনেকটা নিরুত্তাপ অবস্থানে রয়েছে তাদের জোটের শরিকরা। এই আসনে জামায়াত ইসলামির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আহমদ।
এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে কে হন সীমান্তঘেঁষা এই জনপদের ধানের শীষের কাণ্ডারী।