শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
সিলেট রেলপথ শনিবার অবরোধ সাংবাদিক টিপু ও শিপুর পিতার মৃত্যুতে গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবের শোক প্রকাশ হিন্দুদের প্রকৃত ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামী সরকার: গোলাম পরওয়ার দোয়ারাবাজারে দুই নৌকা আটক,উপজেলা প্রশাসনের নীরবতায় প্রশ্ন সরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের কর্মক্ষমতার বার্ষিক মূল্যায়ন হবে নীতিনির্ধারণে নমনীয়তা ও নাগরিক দায়িত্বের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার সিলেটে দ্রুত ছড়াচ্ছে স্কেবিস:বাজারের ঔষধ কাজ করছে না বলে অভিযোগ চিকিৎসক দের পলাতক ডিআইজি এহসানুল্লাহর বিষয়ে যা জানা গেল সিলেটের সাংবাদিক ইসলাম, টিপু ও শিপুর পিতার দাফন সম্পন্ন জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফর নিয়ে দিল্লির কড়া প্রতিক্রিয়া
advertisement
সিলেট বিভাগ

সিলেটে দ্রুত ছড়াচ্ছে স্কেবিস:বাজারের ঔষধ কাজ করছে না বলে অভিযোগ চিকিৎসক দের

সিলেট অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগ স্কেবিস (Scabies)। চিকিৎসকদের অভিযোগ, বাজারে পাওয়া অনেক ওষুধ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলায় রোগ নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে এবং সংক্রমণের হার আরও বাড়ছে।

সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি ক্লিনিক—সব জায়গাতেই স্কেবিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা তীব্র চুলকানি, ত্বকে লালচে দাগ, ফুসকুড়ি এবং ক্ষত নিয়ে প্রতিদিনই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

শহর থেকে গ্রাম—বিভিন্ন এলাকায় একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য একসঙ্গে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা ও তোয়ালে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করার মাধ্যমেই স্কেবিস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, সময়মতো চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমেই এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি হলে স্কেবিস জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।

এ বিষয়ে স্কুলছাত্রী লিজা বেগম বলেন—গত কয়েকদিন ধরে হাতের তীব্র চুলকানিতে ভুগছি। শুরুতে ভেবেছিলাম সাধারণ সমস্যা, কিন্তু এখন ত্বকে ফুসকুড়ি আর ঘা হয়ে গেছে। লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে পারিনি, এমনকি স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গেও মিশতে ভয় লাগে। রাতে চুলকানির কারণে ঘুম হয় না, পড়াশোনাতেও মনোযোগ দিতে পারি না। দিন দিন অবস্থার অবনতি হওয়ায় এখন ভীষণ কষ্ট আর অস্বস্তিতে সময় কাটছে।

এ বিষয়ে সিলেটের বাগবাড়ি এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন-দীর্ঘদিন ধরে আমার দুই হাতে এই সমস্যা চলছে। অনেক ডাক্তার দেখালেও তেমন উন্নতি হয়নি। এখন সবচেয়ে ভয় লাগে— আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের যেন এই রোগ না ছোঁয়।

তিনি আরও বলেন- আগে ভাবতাম এটা ত্বকের সামান্য সমস্যা, কিন্তু এখন বুঝছি এটা আরও গভীর কিছু। দিন দিন হাতের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, কাজ করতেও কষ্ট হয়।

স্কেবিসে আক্রান্ত এক গৃহবধূ রোকেয়া বেগম জানান- প্রথমে তিনি সাধারণ চুলকানি ভেবে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে মলম ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। পরে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা শুরু করলে ধীরে ধীরে উপশম পান। তিনি বলেন-এখন পুরো পরিবার একসঙ্গে ওষুধ ব্যবহার করছি, ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছি।

শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সিলেটের অনেক চিকিৎসকও এ রোগে ভুগছেন। চিকিৎসা দিতে দিতে তারাই এখন রোগের শিকার হয়ে পড়ছেন, যা বিষয়টিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।

এ বিষয়ে সিলেটের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ওয়াজিমা চৌধুরী বলেন— আমি নিজেও এই রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে আমার মাথার পুরো অংশে স্কেবিস ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন নানা ধরনের রোগী আমার চেম্বারে আসেন, সম্ভবত তাদের কারও কাছ থেকেই সংক্রমিত হয়েছি, কারণ এটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। চুলকানির কারণে রাতভর ঘুমাতে পারি না, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ কষ্টদায়ক। নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলেও পুরোপুরি আরাম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা ও সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া খুবই জরুরি।

এ বিষয়ে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (ত্বক ও যৌনরোগ) ডা. ফারজানা ইয়াসমিন সুমা বলেন—বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে স্কেবিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এটি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে সিলেটের নানা জায়গায় এবং নানা বয়সের মানুষের মধ্যে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে স্কুল ও মাদ্রাসায় এই রোগের প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন—স্কেবিস বা চুলকানি রোগকে অনেকেই স্বাভাবিক সমস্যা মনে করেন, কিন্তু অবহেলা করলে এটি দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। এটি একটি সংক্রামক ত্বকের রোগ, যা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা বা ব্যবহৃত জামাকাপড়, বিছানাপত্র, তোয়ালে ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। তাই কেবল আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসাই যথেষ্ট নয়, পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং নিকট সংস্পর্শে থাকা সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিয়মিত পরিচ্ছন্ন থাকা, কাপড় ও বিছানার চাদর রোদে শুকানো এবং নির্ধারিত ওষুধ সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সহজেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আত্মগোপন না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া, এতে জটিলতা এড়ানো যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)–এর সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী ডা. সুফী মুহাম্মদ খালিদ বলেন—স্কেবিস একটি অত্যন্ত সংক্রামক ত্বক রোগ, যা সাধারণ চুলকানির মতো দেখালেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সব জায়গায় সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে যারা গাদাগাদি পরিবেশে থাকেন কিংবা একই বিছানা, পোশাক ও তোয়ালে ব্যবহার করেন, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

দুঃখজনক হলো—অনেকেই এটিকে তেমন গুরুত্ব দেন না, ফলে চিকিৎসা নিতে দেরি হয় এবং পুরো পরিবার আক্রান্ত হয়। হঠাৎ রাতের দিকে তীব্র চুলকানি, ত্বকে ছোট ছোট দানা ও ঘা তৈরি হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন—স্কেবিস একটি অত্যন্ত সংক্রামক ত্বক রোগ, যা আমরা সাধারণভাবে খোশ-পাচড়া নামে জানি। যদিও এটি প্রথমে সাধারণ চুলকানির মতো মনে হতে পারে, কিন্তু দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে যারা ঘনবসতি পরিবেশে থাকেন বা একই বিছানা, পোশাক ও তোয়ালে ব্যবহার করেন, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ডা. নাসির উদ্দিন আরও বলেন—এ ধরনের সংক্রমণ রোধ করতে একই পরিবার বা একই জায়গায় বসবাসকারী সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। এককভাবে চিকিৎসা করলে রোগ পুরোপুরি নির্মূল হবে না এবং পুনঃসংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করলেই দ্রুত সুস্থতা সম্ভব।

এ বিষয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী বলেন—স্কেবিস বা খোশ পাচড়া এখন সিলেটে প্রায় মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই নারী, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের রোগী এই সমস্যায় চিকিৎসা নিতে আমাদের কাছে আসছেন।

তিনি আরও বলেন—সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বাজারের অনেক ওষুধ ঠিকমতো কাজ করছে না। ফলে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে প্রায়ই পুরো পরিবারেই সংক্রমণ দেখা যায়। তাই চিকিৎসা শুরু করার সময় পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে এবং কঠোরভাবে পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলতে হবে। কাপড়, বিছানাপত্র, তোয়ালে নিয়মিত ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে, নইলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন—স্কেবিস একটি সংক্রামক রোগ, যার সংক্রমণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায়। বিশেষ করে একই বিছানা, পোশাক বা তোয়ালে ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ব্যবহৃত জিনিসগুলো গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে; এককভাবে চিকিৎসা করলে রোগ কমবে না। সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ এবং পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চললেই স্কেবিস সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব। এছাড়া, পরিবারের সদস্যদের সচেতন রাখা এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করাও সংক্রমণ রোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই সম্পর্কিত আরো

সিলেট রেলপথ শনিবার অবরোধ

সাংবাদিক টিপু ও শিপুর পিতার মৃত্যুতে গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবের শোক প্রকাশ

হিন্দুদের প্রকৃত ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামী সরকার: গোলাম পরওয়ার

দোয়ারাবাজারে দুই নৌকা আটক,উপজেলা প্রশাসনের নীরবতায় প্রশ্ন

সরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের কর্মক্ষমতার বার্ষিক মূল্যায়ন হবে

নীতিনির্ধারণে নমনীয়তা ও নাগরিক দায়িত্বের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

সিলেটে দ্রুত ছড়াচ্ছে স্কেবিস:বাজারের ঔষধ কাজ করছে না বলে অভিযোগ চিকিৎসক দের

পলাতক ডিআইজি এহসানুল্লাহর বিষয়ে যা জানা গেল

সিলেটের সাংবাদিক ইসলাম, টিপু ও শিপুর পিতার দাফন সম্পন্ন

জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফর নিয়ে দিল্লির কড়া প্রতিক্রিয়া