সিলেট সদর থেকে প্রায় শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সীমান্তঘেঁষা উপজেলা জকিগঞ্জ।এখানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও এখানকার শিক্ষার্থীরা এখনো অনার্স কোর্সের মতো উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত। ফলে উচ্চমাধ্যমিক শেষে অনেক শিক্ষার্থীকেই শিক্ষা জীবন থামিয়ে দিতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। বিশেষ করে দরিদ্র ও মাঝারি আয়ের পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেন না আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে।
জকিগঞ্জ থেকে সিলেট শহরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। প্রতিদিন সিলেট যাওয়া–আসা যেমন কষ্টকর, তেমনি ব্যয়বহুলও। এতে অনেক অভিভাবক সন্তানদের উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করতে না পেরে শিক্ষা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। বিশেষ করে গ্রামের মেয়ে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। নিরাপত্তা ও আর্থিক সংকটের কারণে তারা কলেজ শিক্ষার পর আর এগিয়ে যেতে পারেন না।
ইছামতি ডিগ্রি কলেজ ও জকিগঞ্জ সরকারি কলেজে শুধুমাত্র ডিগ্রি কোর্স চালু আছে। কিন্তু এ কলেজেগুলোতে এখনো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনো অনার্স কোর্স শুরু হয়নি। ফলে প্রতিবছর এখানে কলেজ পাশ করার পরে হাজারো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে।
জকিগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “এখানে অনার্স কোর্স চালু হলে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উপকার পাবে। শিক্ষার হার যেমন বাড়বে, তেমনি ঝরে পড়ার হারও কমে আসবে। শিক্ষার্থীরা সাশ্রয়ী পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ পাবে।”
স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীরা জানান, সরকারের নীতিমালায় প্রতিটি উপজেলায় অনার্স কোর্স চালুর কথা থাকলেও জকিগঞ্জ এখনো সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তারা অবিলম্বে জকিগঞ্জ সরকারি কলেজে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ অন্তত কয়েকটি বিষয়ে অনার্স চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জকিগঞ্জের সচেতন মহল মনে করেন, অনার্স কোর্স চালু হলে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে। পাশাপাশি মাদক, বাল্যবিয়ে ও সামাজিক অপরাধ থেকে যুবসমাজ দূরে থাকবে, কারণ শিক্ষার প্রসার সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি।
তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে জকিগঞ্জেও অনার্স কোর্স চালু করা সম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষাপ্রেমীরা।