সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে সুরমা নদীর পানি নেমে যাওয়ায় জেগে ওঠেছে দুইপাশে চড়। নদীর বুকে জেগে ওঠা চড় পলি মাঠি মিশ্রিত উর্বর আবাদি জমিতে পরিনত হয়েছে। সেখানে চাষ করছে মরিচ, আদা, হলুদ, বাঁধা কপি, ফুল কপি, লাউ, টমেটো, শিম সহ নানা ধরনের শাক-সবজি।
এতে বেড়েছে কর্মসংস্থান। ফসল ঘরে উঠলে অর্থনৈতিক চাকা ঘুরবে চাষিদের। উপজেলার সদর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের চাষি জাহেদুল ইসলাম জানান, নদীতে চড় পড়ায় ফসলের আবাদ শুরু করেছি। চড়ের আশপাশের সব কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষে। বিশেষ করে মরিচ চাষে।
নদীর পানি নেমে যাওয়ায় সেলু মেশিন দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে অনেক জমিতে কয়েকদিনের মধ্যে পুরো চড়াঞ্চাল সবুজ ফসলে ভরে যাবে।
সরজমিন গিয়ে কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তারা মরিচ চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছে।এছাড়াও কৃষকেরা বেশি লাভবান হওয়ার আশায় মরিচ উৎপাদনে উৎসাহিত করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলায় গত মাস থেকে শুরু হয়েছে বীজতলা তৈরি। চলতি মাসে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপন করেছেন চাষিরা। আগামী ডিসেম্বরের শেষ সাপ্তাহ থেকে বাজারে সরবরাহ করতে পারবে মরিচ। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে ৪০০ হেক্টর জমিতে মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই ৩ হাজার কৃষককে কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হবে। এছাড়াও শীতকালীন সবজি চাষ হবে ১৪৪৫ হেক্টর জমিতে।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের কামিনীপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক জালাল উদ্দীন জানান, নদীর চড়ে মোঃ জানু মিয়া ৩ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। তিনি কৃষি শ্রমিক হিসাবে মরিচের চারা রোপন করেছেন। প্রতিদিন ৬০০ টাকা পান। এই টাকা দিয়ে তার সংসার চলে।
হিন্দু কালীপুর গ্রামের রানা দেবনাথ বলেন, গতবছর ১ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছিলাম। বাজারে মরিচের দাম বেশি থাকায় এবার দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। তবে শ্রমিক ঠিক মতো না পাওয়ায় রোপন করতে সময় বেশি লাগছে। আশা করি আগামী সপ্তাহে চারা সবুজ রূপ ধারণ করবে।
সুরমা নদীর চড়ে কম খরচে উৎপাদন ভাল হয় উল্লেখ করে মিলন দেবনাথ জানান, চলতি মৌসুমে সুরমার পানি দেরিতে নামায় মরিচ চাষে একটু বিলম্ব হয়েছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ফসল এলে বাজারে দাম ভাল পাবো। আমি এবার ২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি।
একই গ্রামের রাজমোহন দেবনাথ জানান, গত বছর বৃষ্টির কারণে চারা নষ্ট হয়ে গেলে ২ বার চারা রোপন করতে হয়েছে, তাই খরচের তুলনায় লাভ একটু কম হয়েছে। এবার একই জমিতে মরিচ আবাদ করছি। আশা করি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মরিচের বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা জানান, গতবছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মরিচ ফলনে কিছুটা কম হলেও এবার উপজেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে মসলা জাতীয় ফসল এবং ১৪৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগে সুরমা নদীর দুইপাড়ে হাতে গুনা কয়েকজন কৃষক ফসল ফলাতো, এখন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় এবং পরামর্শে অনেক নতুন নতুন জাতের মসলা জাতীয় ফসল ও শাক-সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। সুরমা নদীর চড়ে পলি মাঠি থাকায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই কমে যাচ্ছে। যার কারণে কৃষকরা বেশি লাবভান হচ্ছে।