ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী আমেজ। প্রায় প্রতিটি এলাকায় চলছে নির্বাচনী আলোচনা আর প্রস্তুতি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তবে দলটির মনোনয়ন পেতে প্রতিদিন দুই উপজেলার আনাচেকানাচে প্রচারণা চালাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ বাস্তবায়নের বার্তা নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন তারা।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন নয়জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন প্রচার-প্রচারণায় বেশ সরব। মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশি হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কখনো এক প্রার্থীর, কখনো অন্য প্রার্থীর পক্ষে মাঠে যাচ্ছেন। এতে কিছুটা বিড়ম্বনারও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আবার দীর্ঘদিন একজন নেতার সঙ্গে রাজনীতি করায় অন্যের পক্ষে যেতে অস্বস্তিতে পড়ছেন। ফলে দ্রুত প্রার্থীর নাম ঘোষণার দাবি উঠেছে তৃণমূল পর্যায়ে।
নেতাকর্মীদের অভিমত, দলের দুর্দিনে যিনি মাঠে ছিলেন এবং নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন, এমন কাউকেই তাঁরা প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে দুই উপজেলায় বিশাল গণমিছিল করেছেন। এসব মিছিলে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীরা, বজায় রাখছেন সবার সঙ্গে যোগাযোগ ও সৌহার্দ্য।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে দেশ-বিদেশে দলের জন্য কাজ করে তিনি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। জিয়া পরিবারের সঙ্গে রয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। রয়েছেন ফয়সল আহমদ চৌধুরী, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীও হয়েছিলেন। সে সময় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিপক্ষে লড়াইয়ে জয়ী হতে না পারলেও এক লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। এখনও তিনি দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়, আছেন আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। দুই উপজেলায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ভালো। দলের যে কোনো সংকটে তিনি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন।
এছাড়াও রয়েছেন এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই নেতা দুই উপজেলায় বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় সমস্যা-সংকট নিয়ে তিনি সরব থাকেন নিয়মিত। তাছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আ. ম. অহিদ আহমদ, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও চিত্রনায়ক হেলাল খান, জেলা বিএনপির সহশিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক তামিম ইয়াহইয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম কমর উদ্দিনের মেয়ে সাবিনা খান পপি, এবং সাবেক সংসদ সদস্য ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়ার মেয়ে সৈয়দা আদিবা হোসেন।
নেতাকর্মীদের আলোচনায় উঠে এসেছে, এনামুল হক চৌধুরী, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও এমরান আহমদ চৌধুরী মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।
অন্যদিকে, কুশিয়ারা তীরবর্তী এই আসনে অতীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে ৬ বার, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ২ বার করে, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীও জয় পেয়েছেন দুইবার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুইবার বিজয়ী হওয়া ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন পরে বিএনপিতে যোগ দেন।
এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ এখনো মাঠে না থাকলেও সরব জামায়াতে ইসলামী। দলটি ইতিমধ্যে একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিনকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছে। প্রতিদিন দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তাঁর পক্ষে জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও সরব। ইতিমধ্যে কিছু উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি এলাকায় আলোচনায় রয়েছেন।
এ ছাড়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মো. ফখরুল ইসলাম বিয়ানীবাজারে নিজস্ব অর্থায়নে কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। শিগগিরই গোলাপগঞ্জেও কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা তাঁর।
এ আসনে আরও রয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী এডভোকেট জাহিদুর রহমান, খেলাফত মজলিসের মাওলানা সাদিকুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা রফিকুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের আজমল হোসেন।