শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
কুলাউড়ায় সমাজসেবক এনামুল ইসলামের সাথে উপজেলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময় সাত বছরের বিরতির পর জিম্বাবুয়ের দলে ক্রেমার কুলাউড়া কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠনে সভা দোয়ারাবাজারে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে তাওহিদী জনতার বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ ১৮ নভেম্বর সাদারপাড়া মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ‘মিনিস্টার বাড়ি’ রক্ষায় একদিকে মানবন্ধন, অন্যদিকে চলছে ভাঙা ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেবে বিএনপি : তারেক রহমান দিরাই বাজারে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা প্রচারে পাবেল চৌধুরী সিলেট রেলস্টেশনে টিকিট সিন্ডিকেট ঠেকাতে র‍্যাবের অভিযান সিলেটের সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সংকট, ভোগান্তিতে সাধারণ রোগী
advertisement
সিলেট বিভাগ

সিলেটের সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সংকট, ভোগান্তিতে সাধারণ রোগী

সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ওষুধ সংকট দিন দিন বেড়েই চলছে। চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা সরকারি ফার্মেসি থেকে ওষুধ না পেয়ে বাধ্য হচ্ছেন বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে কিনতে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ।

যাদের অনেকের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেকেই চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখে বাড়ি ফিরতে হচ্ছেন, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য তৈরি করছে বড় ঝুঁকি। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, ওষুধ সরবরাহে অনিয়ম, দুর্নীতি ও তদারকির অভাবই এই সংকটের মূল কারণ। 

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রিকশাচালক আব্দুল করিম বলেন-ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, কিন্তু হাসপাতালের ফার্মেসিতে একটিও ওষুধ পাইনি। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে প্রায় এক হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়েছে। আমার মতো একজন দিনমজুরের পক্ষে এই খরচ বহন করা সত্যিই কষ্টের। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করি, তার অর্ধেক চলে যায় শুধু ওষুধ কিনতেই। সরকারি হাসপাতালে যদি ওষুধ না পাওয়া যায়, তাহলে গরিব মানুষের চিকিৎসা হবে কোথায়?

নগরীর লোহারপাড়ার বাসিন্দা লুতফুর নাহার বলেন-আমি বাসায় বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করি। অসুস্থ হলে আমাদের ভরসা একমাত্র সরকারি হাসপাতালই। চিকিৎসা ঠিকভাবে দেওয়া হয়, কিন্তু সমস্যা হয় ওষুধের ক্ষেত্রে। ডাক্তার আমাকে ছয় ধরনের ওষুধ লিখে দিয়েছেন, এর মধ্যে মাত্র দুইটি ফার্মেসি থেকে পেয়েছি, বাকি চারটি বাইরে থেকে কিনতে বলেছেন। আমাদের মতো কম আয়ের মানুষের পক্ষে এই খরচ বহন করা খুব কঠিন।

সিলেট সদর হাসপাতালেও চলছে একই চিত্র। রোগীরা অভিযোগ করে বলেন— সরকারিভাবে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার দেখা মিলছে না। অনেক সময় প্রেসক্রিপশনে দেওয়া একটিও ওষুধ ফার্মেসিতে মজুত থাকে না, ফলে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে কিনতে হয় উচ্চমূল্যে।

এ বিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী নগরীর আম্বরখানা বড় বাজারের বাসিন্দা মিনা বেগম বলেন-হাতের ব্যথার চিকিৎসার জন্য আমি সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। চিকিৎসা ঠিকভাবে দেওয়া হলেও প্রেসক্রিপশনে দেওয়া সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে বলা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে এসে যদি নিজের টাকায় সব ওষুধ কিনতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ উপকার পাবে কীভাবে?

এ বিষয়ে সিলেট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান বলেন-প্রতি মাসে আমরা হাসপাতালের প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধের চাহিদা পাঠাই, কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাই  সীমিত। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ও প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ওষুধে ঘাটতি প্রায়ই দেখা যায়। এটি মূলত বাজেট ও কেন্দ্রীয় সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। বরাদ্দ যে অনুপাতে বাড়ার কথা, সে হারে বাড়ছে না— অথচ রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় অনেক সময় রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয় না, যা আমাদের জন্যও বিব্রতকর ও উদ্বেগের বিষয়।

এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন-অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি ও হৃদরোগের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আমরা নিয়মিতভাবে এসব ওষুধের সরবরাহ মনিটর করছি, যাতে কোনো রোগী চিকিৎসা বঞ্চিত না হন। বর্তমানে সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব ওষুধের ঘাটতি নেই বললেই চলে। পাশাপাশি আমরা ওষুধের গুণগতমান ও সরবরাহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। জনগণের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য, এবং সে দিক থেকে আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন-সিলেটে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন, যা আসলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলন। রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের চাহিদাও স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা নিয়মিতভাবে হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সব হাসপাতাল থেকে ওষুধ সংকটের তালিকা সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই নতুন বরাদ্দ পাওয়া যাবে এবং সরবরাহ আরও সহজ ও নিয়মিত হবে। সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে। পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ ও বণ্টন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বাড়ানো হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো হাসপাতালেই ওষুধের ঘাটতি না থাকে এবং রোগীরা আরও উন্নত সেবা পান।

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন—সরকারি হাসপাতালগুলোতে ওষুধের তেমন বড় সংকট নেই, বরং শয্যা সংকটই এখন প্রধান সমস্যা। আগে ৫০০ শয্যার যে হাসপাতাল ছিল, সেটি বর্তমানে ৯০০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। ঔষধও সরবরাহ হচ্ছে সেই অনুপাতে। রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ওষুধের চাহিদাও বেড়েছে। সরবরাহ বাড়ছে, তবে চাহিদার তুলনায় কিছুটা কম। আমরা হাসপাতালের শয্যা ও অবকাঠামো বাড়ানোর কাজ করছি। এটা সম্পন্ন হলে রোগীর চাপ কিছুটা কমবে এবং সেবার মানও উন্নত হবে। আমি মনে করি, ধীরে ধীরে এই সংকট কেটে যাবে।

ওষুধ সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন সরকারি হাসপাতালে গেলে ডাক্তার দেখা যায়, কিন্তু ওষুধ পাওয়া যায় না।

এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

এই সম্পর্কিত আরো

কুলাউড়ায় সমাজসেবক এনামুল ইসলামের সাথে উপজেলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়

সাত বছরের বিরতির পর জিম্বাবুয়ের দলে ক্রেমার

কুলাউড়া কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠনে সভা

দোয়ারাবাজারে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে তাওহিদী জনতার বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ

১৮ নভেম্বর সাদারপাড়া মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল

‘মিনিস্টার বাড়ি’ রক্ষায় একদিকে মানবন্ধন, অন্যদিকে চলছে ভাঙা

ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেবে বিএনপি : তারেক রহমান

দিরাই বাজারে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা প্রচারে পাবেল চৌধুরী

সিলেট রেলস্টেশনে টিকিট সিন্ডিকেট ঠেকাতে র‍্যাবের অভিযান

সিলেটের সরকারি হাসপাতালে ওষুধ সংকট, ভোগান্তিতে সাধারণ রোগী