শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

তিন উপজেলার মিলনস্থলে সেতু নেই, দুর্ভোগে ৫ লক্ষাধিক মানুষ

দিরাই, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার মিলন ঘটেছে তিন নদীর মোহনায়। ডাউকা, মহাসিং ও কামারখাল নদী এসে মিশেছে চণ্ডীডহর এলাকায়। তিন উপজেলার সীমা রেখা হওয়ায় ভৌগলিকভাবে জায়গাটির গুরুত্ব বেশি। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলাগুলোর বাসিন্দাদের দাবি, তিন নদীর মোহনায় একটি সেতু নির্মাণ করার। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, স্থানীয় রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও সেসব প্রতিশ্রুতি কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। এতে ক্রমশ দুর্ভোগ বাড়ে তিন উপজেলালর লক্ষ লক্ষ মানুষের। দুর্ভোগ যত বাড়ে, মানুষের ভিতরে ক্ষোভ ততই বাড়তে থাকে এলাকাবাসীর। এই ক্ষোভ থেকেই সেতুর দাবিতে মানববন্ধনের ডাক দেন তিন উপজেলার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার বিকাল আড়াইটায় চণ্ডীডহর এলাকায় মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই কাউয়াজুরি, নগদীপুর, সিকন্দরপুর, হোসেনপুর, পাইকাপন, তেলিকোনা, কামারখালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম থেকে হাজারো মানুষ আসতে থাকেন চণ্ডীডহর এলাকায়। নদীগুলোর তিন পাড়ের তিন উপজেলা অংশে অবস্থান করে চণ্ডীডহর ব্রিজ চাই দাবি তুলেন। এসময় বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মিছিল নিয়েও আসেন ভুক্তভোগী মানুষেরা।

স্থানীয়রা জানান, তিন নদীর মিলন স্থলে সেতু না থাকায় তিন উপজেলার প্রায় ১শ গ্রামের পাঁচলক্ষের বেশি মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। লেখাপড়া, চিকিৎসা ও ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে এলাকার মানুষকে। দিরাই, শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুরের মানুষের মাঝে সংযোগ করতে এই সেতু নির্মাণ করা জরুরী। এসময় জগদল ইউনিয়নের নগদীপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. জুয়েল আহমদ বলেন, কিছুদিন আগে আমার ভাবীর সন্তান প্রসবের সময় রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সড়কপথ না থাকায়, ব্রিজ না থাকায় রাতের বেলা নৌকা পেতে দেড়ি হয়৷ চণ্ডীডহর নিয়ে যাওয়ার আগেই আমার ভাতিজি প্রসবের না হতেই মারা যায়। যদি ব্রিজ থাকতো তাহলে হয়তো সময় মতো আমার ভাবীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতাম।

মুফতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাইকাপন গ্রামে বেশ কিছুদিন আগে আগুন লেগেছিলো। সেতু ও সড়কপথ না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারেনি। তাই ইচ্ছে মতো আগুন জ্বলে তারপর নিভেছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চণ্ডীডহর এলাকায় তিনটি নদী একসাথে করেছে তিন উপজেলাকে। সড়কপথ নেই এই এলাকায়। তেলিকোনা এলাকায় গাড়ি রেখে নৌকায় করে আসতে হয় দিরাই কিংবা শান্তিগঞ্জ উপজেলায়। দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নে আছে কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিলা মাদ্রাসাসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আছে হোসেনপুর, নগদীপুর, জগদলবাজারসহ বড় বড় বাজার। বাণিজ্যিকভাবে এ বাজারগুলো এই অঞ্চলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাইকাপন, ফটইখাড়া, জামখলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার যোগাযোগ এই মোহনা হয়ে। কিন্ত সেতু না থাকায় সড়কপথে যোগাযোগ নেই এই এলাকাগুলোর। নৌকায় করে চলতে হচ্ছে তাদের। এই তুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান এলাকার সাধারণ মানুষ।

আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, একটি সেতু না থাকায় মনে হয় আমরা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। আমরা অনেকটা পিচিয়ে আছি। আমাদের এই এলাকাকে তুলতে হলে একটি ব্রিজ দরকার। না হলে আমাদের লেখাপাড়াসহ জীবনের গতি থেমে যাচ্ছে। সবকিছুতে চলতে ফিরতে অসুবিধা হচ্ছে।

মাও. সোয়াইব আহমদ ও শাহ আজিজ নামের এক ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা একটি সেতুর অভাবে অনেকটা পিচিয়ে আছি। আমাদের সকলের দাবি, দাবিকৃত জায়গায় দ্রুত সেতু নির্মান করা হোক।

সুনামগঞ্জ জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, আগের সরকারের সময় সাড়ে ৫ শ’ কোটি টাকা ব্যায়ে এই সেতুসহ দিরাইএর জগদল ইউনিয়নের সড়কে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিলো। প্রকল্পটি অনুমোদন পায়নি। এখানে আমাদেরও কিছু করার নেই। প্রকল্প পাস হলে আমরা কাজ করতে পারতাম। এখনো প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে আছে। কেউ যদি এই প্রকল্প খুঁজে বের করে নাড়াচাড়া করেন এবং জায়গামত নক দিতে পারেন তাহলে প্রকল্পটি পাস হতে পারে।

এই সম্পর্কিত আরো