সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় আনুমানিক ২৫ লাখ টাকার অবৈধ চাঁই (মৎস্য নিধনকারী ফাঁদ) জব্দের ঘটনায় নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মৎস্য ধ্বংসে ব্যবহৃত ৮৩ হাজার ৭৫০টি কিরণমালা চাঁই জব্দ করে শাল্লা উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তর। সেদিনের অভিযানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস এবং মৎস্য কর্মকর্তা সন্দীপন মজুমদার। অভিযান শেষে জব্দকৃত চাঁই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নোমান ও সচিব প্রবীন পুরকায়স্থের জিম্মায় রেখে আসা হয়।
জব্দকৃত চাঁই প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মৎস্য কর্মকর্তা সন্দীপন মজুমদার বিতর্কিত বক্তব্যের আশ্রয় নিয়ে তিনি বলেন,“আমার বিরুদ্ধেও যেমন অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, শুনেছি ইউএনও’র বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ আছে। সরকারি অফিসারদের নিয়ে সবাই একই ধারণা পোষণ করেন। আমি ছাড়াও আপনারা দেশের তেরো লক্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ তুলেন। টাকার পেছনে আপনি-আমি—সবাই ঘোরাফেরা করি। সরকারি দপ্তরে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়।”
তিনি আরও বলেন, “মৎস্য অধিদপ্তরের কাজ হলেও,সেটা আমরা করিনি,ইউএনও অভিযান করেছে। অনেক সময় ইউএনও নিজের উদ্যোগে অভিযান চালান। চাঁই ধরিয়ে দেওয়ার পেছনে স্থানীয় কিছু মানুষ ও সাংবাদিকও ছিলেন।”
জব্দ চাঁইগুলো ধ্বংস না করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কতগুলো পুড়ানো হয়েছে সেটা আমি জানি না। কেন বাকি চাঁই ধ্বংস করা হয়নি—সেটা ইউএনওকে জিজ্ঞেস করুন। চাঁই পুড়ালে পরিবেশের ক্ষতি হয়।”
অভিযান পরিচালনার পাঁচ মাস পার হলেও জব্দকৃত অবৈধ চাঁইগুলো এখনো ধ্বংস না করায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, চাঁই মালিকদের কাছ থেকে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে রফাদফা করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্যামারচরের একজন বাসিন্দা জানান, অবৈধ এই চাঁইগুলো ছেড়ে দিতে পার্টির কাছে সাত লক্ষ টাকা চেয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তা। পার্টি তিন লক্ষ টাকা দিতে রাজি হলেও মৎস্য কর্মকর্তা এই কম টাকায় রাজি হননি। তিনি জানান, মোটা অংকের ঘুষ খেয়ে চাঁইগুলো ছেড়ে দিতে মৎস্য কর্মকর্তা সন্দিপন মজুমদার এখনো রফাদফা চালিয়ে যাচ্ছেন। আনিসুল হক চৌধুরী নামের এক যুবক বলেন, মৎস্য কর্মকর্তার এমন বক্তব্যেই অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এরকম কর্মকাণ্ড ও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ওই কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।
চাঁইয়ের জিম্মাদার আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন্ নোমান বলেন, চাঁইগুলো কোন অবস্থায় আছে সেগুলো জানার জন্য গতকাল ইউএনও আমাকে ফোন করেছিল। আমি দেখার পরে উনাকে ছবিও পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, ইউএনও তাকে বলেছেন চাঁইগুলো নাকি সুনামগঞ্জের কোথাও পাঠিয়ে দিবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এলিজ ফারজানা বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, চাঁইগুলো ব্যাপারে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবেশ সম্মতভাবে আগামী সপ্তাহে একটা কিছু করা হবে।