দুই বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে চলছে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে নিয়ে নানা নাটকীয়তা। দু’জনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই এ নিয়ে মঞ্চায়িত হয় নানা নাটক। বিশেষ করে তামিম তো জাতীয় দল থেকে অবসর ঘোষণা করেই দিয়েছিলেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা ভেঙে তিনি ক্রিকেটে ফিরে আসেন। তবে সেই থেকে ইনজুরিসহ নানা কারণে তিনি আছেন দলের বাইরে। এখন পর্যন্ত কোনো ফরম্যাট থেকে তিনি অবসরের ঘোষণা দেননি। সবশেষ দেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছেন ২০২৩-এ। অন্যদিকে ২০২০-এ তিনি নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। গুঞ্জন ছিল তিনি আগামী মাসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে অবসরের ঘোষণা দিবেন। বিসিবি’র পক্ষ থেকে তাকে এই আসরে খেলার অনুরোধও করা হয়েছে। যা নিয়ে গতকাল নির্বাচকদের সঙ্গে তিনি বসেছিলেন আলোচনায়। সিলেটে তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। সেখানেই একটি পাঁচ তারকা হোটেলে তার সঙ্গে আলোচনায় বসেন তামিম। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ফেরা নিয়ে নাটকীয়তার এদিনও অবসান হয়নি। তার জন্য এখনো করতে হবে আরো কিছু দিন অপেক্ষা। এমনটাই জানিয়েছেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনি বলেন, ‘তামিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে আপনাদের একটা আগ্রহ থাকবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারটা নিয়ে এর আগেই হয়তো তার সঙ্গে আমাদের আরেকটু আলোচনা হতে পারত। যাই হোক, সামনে আমাদের একটা বড় ইভেন্ট আছে। আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ওই মুহূর্তে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না। কারণ এটা অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত।’ প্রধান নির্বাচকের কথায় স্পষ্ট যে তারা এখনো তামিমের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। গুঞ্জন ছিল তিনি হয়তো খেলবেন নয়তো অবসরের বিষয়টি নির্বাচকদের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দিবেন। কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে এখনো আরো কিছুটা সময়। আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানেরও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার কথা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তিনি দেশছাড়া। গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। তিনি ছিলেন সেই পতিত সরকারি দলের সংসদ সদস্য। গেল বছর ৫ই আগষ্টের পর থেকে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি জনরোষের কারণে। দেশের বাইরে থেকে জাতীয় দলে খেললেও তিনি ভারত সফরেই জানিয়ে দিয়েছেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা। যদিও শেষ টেস্টটি তার দেশের মাটিতে খেলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অন্তবর্তীকালীন সরকার অনুমতি না দেয়াতে তার দেশে ফেরা হয়নি। তার বিরুদ্ধে আছে খুনের মামলা সেই সঙ্গে সরকারি আদেশে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি তিনি ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন। যে কারণে তার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা অনিশ্চয়ত। যদি বোলিং পরীক্ষায় তিনি উৎরে যান তবেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দলে তাকে ভাবা হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। গাজী আশরাফ লিপু বলেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিব আল হাসান থাকবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত হবে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষার ফল আসার পর। ফলে সাকিবের বোলিং অ্যাকশনের বৈধতার ওপর ঝুলে আছে আসন্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিবের দলে থাকা।’ গতকাল সিলেটে গণমাধ্যমকে প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে থাকার জন্য তামিমকে অনুরোধ করেছেন নির্বাচক কমিটি ও অধিনায়ক। লম্বা বৈঠকের পর সময় চেয়েছেন অভিজ্ঞ ওপেনার। বিকালে প্রধান নির্বাচক লিপু জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকতে বিসিবি ও নির্বাচকদের অনুরোধে ভাবার জন্য সময় নিয়েছেন তামিম। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির জন্য দল ঘোষণার শেষ সময় আগামী রোববার। দল ঘোষণার পরও অবশ্য চাইলে সেই দলে পরিবর্তন আনা যাবে পরের এক মাসে। তবে তামিমের সিদ্ধান্ত জানা যেতে পারে দিন দুয়েকের মধ্যেই। তার সঙ্গে আলোচনা নিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘বেশ কিছু ব্যাপারে আমরা খোলামেলা কথা বলেছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা হয়েছে অবশ্যই। বর্তমান পরিস্থিতি, বাংলাদেশ ক্রিকেট, জাতীয় দল, বিপিএল, সবকিছু নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।’
লিপু বলেন, ‘আমাদের যেমন আমাদের ওপর বোর্ড আছে। বোর্ডের তরফ থেকে আমরা এসেছি। এখানে কোনো অসুবিধা নাই। পাশাপাশি খেয়াল করতে হবে, একটা খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় এ সমস্ত ইস্যুতে ফেরত আসার ব্যাপারে তার ঘনিষ্ঠজন, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কিংবা তার প্রিয় কোচ অথবা শুভাকাঙ্ক্ষী, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার একটা ব্যাপার থাকে। সেক্ষেত্রে একটু সময় নেওয়ার তো ব্যাপার এসেই যায়। আমাদের যেহেতু ১২ তারিখে দল ঘোষণা করতে হবে, তার আগেই আমাদেরকে দলটা দিতে হবে বোর্ডের কাছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সময় আছে, তাকে সময় দেই, তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তিনি একটা টুর্নামেন্ট খেলছেন, আমাদের প্রাথমিক আলোচনা আমরা সেরে নিয়েছি। আমাদের আলোচনার বিষয় আমাদের মধ্যেই থাক। যেহেতু আমি বললাম ব্যাপারটা আলোচনা করেছি, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। সে সিদ্ধান্তের জন্য তামিম ইকবালকে একটু সময় দিতে হবে।’