সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
প্রিজন ভ্যানে জেদ করে লোহার রড ধরে যে কাণ্ড করলেন ইনু কোম্পানীগঞ্জে বিপুল পরিমাণ মদের চালান নোহাসহ আটক। ‎ শাল্লায় নৌ-পুলিশের মাদক আটককান্ডে ১৫০ লিটার মদসহ তিন মোটরসাইকেল উদাও! আবেদন না করেই ও পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি চাকরি সালমান শাহ হত্যা মামলায় সামিরা ও ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা কুলাউড়ায় রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান ৩ যাত্রীকে জরিমানা শেষ মুহূর্তে বিএনপি'র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ - দিরাই-শাল্লা আসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা কুলাউড়ায় বিজিবি ক্যাম্পের পাশ থেকেই মূল্যবান সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ কুলাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ৪ জাপানে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি জানা গেল
advertisement
বিশেষ প্রতিবেদন

রাতারগুলে 'রক্ষকই ভক্ষক': জীববৈচিত্র্য ও পর্যটনে মারাত্মক হুমকি

দেশের একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন 'রাতারগুল', যা 'বাংলার অ্যামাজন' নামে পরিচিত, সেখানে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে। এই কর্মকাণ্ডের ফলে বনের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে এবং পর্যটকরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগের তীর সরাসরি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির দিকে। স্থানীয়রা এই কমিটিকে ‘লুটপাটের কমিটি’ উল্লেখ করে বলেন শুধু মাছ নয় এই কমিটি ও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে রাতারগুলের উন্নয়নের জন্য আসা টাকাসহ তারা ভাগবাটোরা করে নেন। এছাড়া পর্যটক হয়রানি, টিকিটের টাকা নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগও রয়েছে।


সাম্প্রতিক সময়ে রাতারগুলের 'রক্ষকই এখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে' বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কৈয়ার খালের মুখে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে খোদ জলাবন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে। এই কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মাছ নিধন ছাড়াও গাছ কেটে নেওয়া এবং টিকিটের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এর আগেও অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার ও গাছ চুরির অভিযোগ ছিল কমিটির লোকজন ও বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।


সরেজমিনে দেখা যায়, রাতারগুলে প্রবেশের তিনটি প্রধান সড়কের মধ্যে সিলেট সদর উপজেলার মটরঘাট থেকে নৌকাযোগে আধা কিলোমিটার দূরে কৈয়ার খালে বিশাল এলাকা জুড়ে অবৈধ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি পর্যটকবাহী নৌকা ভেতরে ঢোকার পথ রাখা হয়েছে। সেখানে আতিক নামের এক ব্যক্তি একটি নৌকায় বসে জাল পাহারা দিচ্ছেন। তার কাছে এই জালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাতের আঁধারে গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কমিটির সভাপতি মাহবুব সাহেবের নির্দেশে এখানে জাল ফেলা হয়েছে। মাছ ধরার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আতিক বলেন, "আমরা তো মাছ বেচি না ভাই, খাইবার মাছ দুইটা মারি।" তিনি আরও যোগ করেন, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহবুব আলমের ভেতরে বিল রয়েছে এবং এখানে জাল ফেলায় দেশি মাছগুলো তার বিলে ঢুকছে।


তাছাড়া দেখা যায়, বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম স্বাক্ষরিত সরকারি আদেশে সিলেট বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখলেও প্রতিদিন ১০০টির অধিক স্টীল বডি নৌকা গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বালি-পাথর নিতে সুরমা হয়ে রাতারগুল ব্যবহার করছে। যার ফলে রাতারগুলের পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এমনকি এসব স্টীল বডির নৌকার কারণে ঘুরতে আসা পর্যটকরা ভয়ের মধ্যে থাকেন।


সাংবাদিকদের আসার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নূর মিয়া। তিনি বলেন, কমিটির সভাপতি মাহবুব ও বন বিভাগের রেঞ্জারের নির্দেশে জাল ফেলা হয়েছে। মাছ ধরার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, "মাছ চাইটা পড়লে আমরা খাই আরকি।" পরে তিনি কথা পাল্টে স্থানীয় জনসাধারণের উপর দোষ চাপিয়ে বলেন, তারা রাতের বেলা গাছ কেটে নিয়ে যায়। তবে গাছ চুরি রোধে তারা নদীতে জাল ফেলে কিভাবে প্রতিরোধ করছেন, সে বিষয়ে তিনি কোনো সুদুত্তর দিতে পারেননি। পর্যটকদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি নৌকা যাওয়ার মতো পথ আমরা করে দিয়েছি।


স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান এবং সংবাদকর্মী মতিন মিলে এসব জাল ফেলে মাছ নিধন, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি করছেন এবং পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যাহত করছেন। এ বিষয়ে বন বিভাগকে জানানো হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, "আগে আমাদের এলাকার লোকজন এখান থেকে মাছ ধরে খেতো। কিন্তু রাতারগুল রক্ষায় আমরা এলাকাবাসী এখন আর মাছ ধরি না। অথচ রাতারগুল বাঁচাতে যারা কমিটিতে আছে তারাই মাছ ধরছে, গাছ কাটছে, পাখি শিকার করছে আর দোষ দিচ্ছে এলাকাবাসীর উপর। আপনারা সরজমিনে গিয়ে দেখেন কারা জালের পাশে নৌকায় বসে পাহারা দিচ্ছে। মৎস্য নিধন করছে তারা আর দোষ দিচ্ছে এলাকাবাসীকে। রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে এই কমিটি নামের সিন্ডিকেট।"


ঘুরতে আসা পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এখানে রাতারগুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি, কিন্তু এখানে জাল দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আমাদের বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া এই জালের জন্য যেকোনো সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমনকি নৌকা ডোবারও সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এখানে বড় বড় স্টীল বডি নৌকা ও অদক্ষ বাচ্ছাদের দিয়ে নৌকা পরিচালনা চরম অব্যবস্থাপনার স্পষ্ট উদাহরণ।

 

পরিবেশ ও জলবায়ু ও বন বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ‘লিগাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভাইরোমেন্ট’ (Legal Initiative for Forest and Environment - লাইফ)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি এম. আলী বলেন, "অবৈধভাবে রাতারগুলে জাল ফেলে মৎস্য নিধনের ফলে ছোট মাছ, শামুক-ঝিনুকসহ জলজ প্রাণীর প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে শুধু মাছের প্রজাতিই নয়, এসব মাছের ওপর নির্ভরশীল পাখি, সরীসৃপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, যা রাতারগুলের সম্পূর্ণ জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।"


রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, যারা এসব বলেছে সবকিছু মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি প্রয়োজনে নুর ও মাঝি আতিককে সামনে এনে জিঞ্জেস করব। কারণ আমি রাত দেড়টায় খবর পেয়ে তাৎক্সনিক ব্যবাস্থ নিয়েছি। এখানে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই।

স্টীল বডি নৌকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে বালি তোলার কোনো সুযোগ নেই। কিছু দিন আগে একটি পক্ষ তুলেছিল, আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে এগুলো থামানোর আমরা কেউ না, এগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।


কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান বলেন, স্টিল বডি নৌকা বালু আনার জন্য গোয়াইনঘাট যায়, স্টিল বডি ও লাকড়ির নৌকা চলার জন্য এই নদীটা এতে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তবে জাল ফেলার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি সরজমিন গিয়েছি, ঘটনাস্থলে কোনো জাল দেখিনি। তবে বিট অফিসার ও রেঞ্জ অফিসারকে অ্যাকশন নেওয়ার জন্য বলেছি। আমরা পাবলিক! আমাদের অ্যাকশন নেওয়ার কোনো অধিকার নেই।


কমিটির সদস্য সাংবাদিক এমএ মতিন জাল ফেলে মৎস্য নিধনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার বাড়ি সালুটিকর আমি কীভাবে এখানে জাল ফেলব। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করলে আমি কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি অবগত করিছি।

 

সিলেট বনবিভাগের সারি রেঞ্জের রেঞ্জার শাহ আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আপনি অফিসে আসেন বক্তব্য জানতে চাইলে! কেন মুঠোফোনে বক্তব্য দিবেন না জানতে চাইলে, তিনি বলেন এটা আমার নিয়ম!


গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাল ফেলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন এবং স্টীল বডি নৌকা রাতারগুল দিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি।


গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, জাল ও স্টীল বডির নৌকার বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিব। পরিবেশ ও রাতারগুল রক্ষায় এক বিন্দু ছাড় নেই।

 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এই সম্পর্কিত আরো

প্রিজন ভ্যানে জেদ করে লোহার রড ধরে যে কাণ্ড করলেন ইনু

কোম্পানীগঞ্জে বিপুল পরিমাণ মদের চালান নোহাসহ আটক। ‎

শাল্লায় নৌ-পুলিশের মাদক আটককান্ডে ১৫০ লিটার মদসহ তিন মোটরসাইকেল উদাও!

আবেদন না করেই ও পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি চাকরি

সালমান শাহ হত্যা মামলায় সামিরা ও ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

কুলাউড়ায় রেলওয়ে জংশন স্টেশনে অভিযান ৩ যাত্রীকে জরিমানা

শেষ মুহূর্তে বিএনপি'র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ দিরাই-শাল্লা আসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় নেতাকর্মীরা

কুলাউড়ায় বিজিবি ক্যাম্পের পাশ থেকেই মূল্যবান সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ

কুলাউড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ৪

জাপানে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের অগ্রগতি জানা গেল