সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
বিশেষ প্রতিবেদন

জাফলংয়ে ভাসমান দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির মহোৎসব

জাফলং যেন লুটপাটের এক জনপদে রূপান্তরিত হয়েছে। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তেনের পর যার যেই রকম ইচ্ছে সে রকমভাবে লুটপাট ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। পাথর, বালি, চোরাচালান থেকে পর্যটন ব্যবসা সব জায়গাতেই এখন চাঁদাবাজ ও লুটপাটকারীদের দৌরাত্ম্য। এ যেন রীতীমতো ‘মগের মুল্লুকে’ পরিণত হয়েছে গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে। এদিকে প্রকৃতি কন্যা জাফলং ধ্বংসে মেতে উঠেছে আরেকটি চক্র। আর এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে কুদ্দুছ মিয়া, সেলিম আহমদ, কাওছার, হোসেন মিয়া ও আলমগীর মিয়া।


সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পিকনিক সেন্টার, বিডিআর ক্যাম্পের আশপাশ, জিরো পয়েন্টে নামতে দুই পাশের সিঁড়ি তাছাড়া জিরো পয়েন্টের নিচে মিলে প্রায় ৪ শতাধিক অবৈধ ‘ভাসমান দোকান’ বসিয়েছে কথিত দুইটি সমিতির নেতা। সমিতির নাম ভাঙিয়ে তারা অবাধে ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভাসমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসানোর মূলহোতা কথিত বৃহত্তর জাফলং পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কুদ্দুছ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাওছার এবং জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া ও আলমগীর মিয়া। তারা সরকারের খাস জমি লিজ এনেছেন দাবি করে এসব ভাসমান ব্যবসায়ীদের দোকান ভাড়া দিয়েছেন। এই চাঁদাবাজ চক্র প্রতিদিন তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান প্রতি ৫শ’ থেকে ১হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। তাদের সাথে আছেন গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের এক শীর্ষ নেতা। যিনি সাংবাদিকসহ প্রশাসন ম্যানেজ করে থাকেন।

এদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে শুধু বৈধভাবে অস্থায়ী লিজ প্রদান করে এসব ভাসমান ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করে বড় অংকের রাজস্ব আদায় করতে পারত। এবং ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের কবল থেকে নিরাপদে ব্যবসা করতে পারত। ‘সরকারের খাসজমির ওপর নির্মিত এসব দোকান থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি চাঁদা তোলা হলেও তার কোনো তথ্য নেই গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের কাছে। বছরের পর বছর এই খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ভাসমান ব্যবসায়ী জাতীয় নির্বচনকে ইঙ্গিত করে বলেন, আর ৭ মাস পরে ইতা শেষ।

স্থানীয় দুই সংবাদকর্মী জানান, আমি জাফলং ঘুরতে গিয়েছিলাম, তখন আমার সামনে ভাসমান এক ব্যাবসীর কাছে থেকে স্থানীয় চঁদাবাজারা চাঁদার আদায় করছিলো। বিষয়টি কি জানতে চাইলে আমাকে এক সংবাদকর্মী ফোন দিয়ে বলেন এসব (চাঁদাবাজী) নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না, আপনি আপনার এলকায় গিয়ে সাংবাদিকতা করেন।

অন্য আরেক সংবাদকর্মী বলেন, জাফলং মানেই চাদাঁবাজী। এখানে প্রশাসন, সাংবাদিক ও চাঁদাবাজরা মিলেমিশে চলেন। তাই এখানে পর্যটকরা বার বার হামলার শিকার হলেও স্থানীয় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কাউকে কখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো প্রশাসনের কতিপয় কিছু কর্মকর্তার সাথে প্রকাশ্যে এরা দহরম মহরম করে চলে।

তাঁরা আরোও এসব অবধৈ কর্মকান্ডে যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিৎ। বর্তমান সরকারে পরিবেশ উপদেষ্টা জাফলংয়ের সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।

বৃহত্তর জাফলং পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কুদ্দুছ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করলে ও কথা বলেন নি।  
 
সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে চাঁদা তোলার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সমন্বয় করে ভাসমান দোকান থেকে টাকা তুলছি। আপনি নিউজ করে কোনও লাভ হবে না তার চাইতে জাফলং আসেন, কিছু লাগলে আপনিও নিবেন, সাবাই যেভাবে নেয়। জাফলংয়ে আমরা যা ইচ্ছে করবো-এগুলো থামাতে পারবেন না।

জাফলং বিট অফিসার এএসআই ওবায়দুল্লার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভাসমান দোকান বসিয়ে কে বা কারা চাঁদাবাজি করছে তা জানা নেই। তবে এসব বিষয়ে আমি ওসি ও উপজেলা নির্বাহী স্যারকে অবগত করব।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমদ সরকার বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশ জিরো টলারেন্সে আছে। 

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন, এসব অবধৈ দোকানপাট সরানোর জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে । আমরা শিগগিরই দোকনাপাট উচ্ছেদে হার্ডলাইনে যাবো। এসব চাদাঁবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. সম্রাট তালুকদার বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে। তবে পুলিশের কেউ চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকলে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেব।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, অবৈধ ভাসামান দোকানের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই সম্পর্কিত আরো