জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, কোনোভাবেই যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে তাহলে আপনাদের ৪ কোটি সন্তানদের তারা বাঁচতে দিবে না। আপনারা অনেকেই ভাবছেন আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয় নাই। দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা দেখেছি ঢাকায় যখন আগুন লেগেছে তখন সেই আগুনে আলু পোড়া দিয়ে খেতে এসেছে আওয়ামী লীগ। আপনি বিএনপি করেন, জামায়াত করেন আপত্তি নেই; কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করবেন তা কখনো মেনে নেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাতে চাই- আপনাদের ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ভবিষ্যৎ ফ্যাসিবাদ মোকাবেলায় আমরা কুমিল্লাকে এনসিপির ক্যান্টনমেন্ট বানাতে চাই।
দেশ গড়তে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে শোকসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা দম্ভ করে মাটিতে হাঁটে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেন। হাসিনাকে ধ্বংস করার মাধ্যমে আমরা সেটার প্রমাণ পেয়েছি। খুনি বাহারকে উৎখাত করার মধ্য দিয়ে, সূচনাকে উৎখাত করার মধ্য দিয়ে তার প্রমাণ পেয়েছি। হাসিনা দম্ভ করে বলেছিলেন- কুমিল্লা নামের আগে ক্যু রয়েছে। এই কুমিল্লা নামে কোনো বিভাগ হবে না। আমরা হাসিনাকে উৎখাত করে বলছি বিভাগ হবে কুমিল্লা নামেই। বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছে কুমিল্লা। কুমিল্লার মানুষ আত্মনির্ভরশীল। রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া কুমিল্লায় লাগে নাই। কুমিল্লার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগের মাধ্যমে। রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগে এখানে উন্নয়ন হয়নি। সরকারকে অবশ্যই কুমিল্লার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকারকে বলতে চাই- মাইলস্টোনে যে ঘটনাটি ঘটেছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। কেন খারাপ যুদ্ধবিমান দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো তার তদন্ত করতে হবে। সরকার জবাবদিহি করতে হবে। লাশের সংখ্যা নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে সেগুলো স্পষ্ট করতে হবে। যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। যারা আহত আছে তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনার সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল কুমিল্লা। এ কুমিল্লা থেকেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, পরাজিত শক্তি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা আবারো গুম খুনের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। এ দেশে আর ফ্যাসিবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া হবে না। আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের বার্তা নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি।
তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেব। আমাদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে ফ্যাসিবাদ এর সুযোগ নিতে পারে। সুতরাং আগামীর বাংলাদেশকে সুখী এবং সমৃদ্ধশালী করতে হলে সকলে মিলেমিশে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
মাইলস্টোনের আহত-নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, এ ঘটনা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমরা গভীরভাবে এ ব্যথা অনুভব করছি।
সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, দেশে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই। আপনারা দেখেছেন ব্যবসায়ীদের কিভাবে পিটিয়ে এবং পাথর মেরে হত্যা করা হয়। ব্যবসায়ীরা চাঁদা না দিলে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা এই বাংলাদেশের জন্য আন্দোলন করিনি। এক চাঁদাবাজ খেদালে আরেক চাঁদাবাজ এসে হাজির হয়। বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজ দূর করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এনসিপির নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনসাধারণকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় যুব উইংয়ের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম বলেন, খন্দকার মুশতাকের বাড়ি কুমিল্লায় হওয়ায় হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ করে নাই। কুমিল্লার মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার ক্ষোভের শেষ নেই। বাকশালের পতন হয়েছে কুমিল্লার সূর্য সন্তানদের হাতে। ফ্যাসিবাদের পতনের অগ্রণী ভূমিকায় ছিল কুমিল্লার সন্তানেরা। তাই শেখ হাসিনা সব সময় কুমিল্লাকে ভয় পেতেন। কুমিল্লাকে সব সময় দাবিয়ে রাখা হয়েছে। জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে আর এই ধরনের বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না। অবিলম্বে কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজ বাহার-সূচনা শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লি পালিয়েছে। আমরা আগে বলেছিলাম যুব সমাজ যখন জেগে ওঠবে তখন তোমাদের এ দেশে আর ঠাঁই হবে না। এই কুমিল্লাতে আর কখনো কোনো চাঁদাবাজ ফিরে আসবে না। আমরা তাদের ফিরে আসতে দেব না। চাঁদাবাজ এবং ফ্যাসিবাদ এই কুমিল্লাতে কায়েম করতে দেওয়া হবে না। কুমিল্লাতে গুণী লোকের অভাব নেই। কিন্তু তাদের দায় এবং দরদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক ঐক্য ব্যতীত এই কুমিল্লাকে কখনো সমৃদ্ধশালী করা সম্ভব হবে না।
এর আগে এনসিপির পদযাত্রা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এনসিপির ওই কর্মসূচিতে ঘিরে নগরীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন, যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির। তাছাড়া জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।