বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করেছিলাম ডেমোক্রেসির জন্য। এখন দেখছি সারা দেশে মবোক্রেসির রাজত্ব চলছে। আর এখন যারা গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখাচ্ছেন, তারা কারা? এবং কেন? এর জবাব হচ্ছে-সরকারের নির্লিপ্ততা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাদের ব্যর্থতা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্লিপ্ততায় সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে’ এ কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আজ গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে তার মধ্য দিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী দল বিএনপিকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। কারা ফ্যাসিবাদের আগমন চায়, যারা দেশে ফ্যাসিবাদের প্রত্যাবর্তন চায়, পুনর্বাসন চায়-সেই প্রশ্নের জবাব আমরা দিতে পারি।’
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কায়দার যারা ইস্যু সৃষ্টি করছে, সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল ও বিলম্বিত করার জন্য যারা চেষ্টা করছে, তারা যেন আশ্রয়-প্রশ্রয় না পায়। আর জনগণের মনে যেন কোনো প্রশ্নের উদ্রেগ না হয় যে, সরকার বোধহয় একটি নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করিনি ফ্যাসিবাদী পতিত শক্তি গোপালগঞ্জে হোক আর যেখানেই হোক, গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির ওপর হামলা করার সাহস পাবে। কিন্তু কেন? এই কেনর জবাব হচ্ছে, যারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল সংগঠিত করেছে, যাদের এখনো নিবন্ধন নেই, তারা অনেক আবেগতাড়িত হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে এমন সব রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে, সেই রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি হামলা করছে। যেভাবে আমরা এনসিপির কর্মসূচির ধরন দেখছি, তাতে একটা বার্তা পাচ্ছি-কোনো না কোনো বাহানায় এমন কোনো অবস্থা সৃষ্টি করা, যাতে বলতে পারে এ সরকার কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার নির্বাচন কীভাবে দেবে?’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আপনারা বলছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে; কিন্তু সরকারের তো আপনারাও (এনসিপি) অংশ। দেশের মানুষ সবই জানে। আপনাদের দুজন উপদেষ্টা সেই সরকারে বসে আছেন। দুদিন পর আপনাদের সঙ্গে তারা যোগদান করবেন। তারপর আপনাদের সঙ্গে নির্বাচন করবে। এ দৃশ্য দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।’
এনসিপির সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কিছু প্রশ্ন আপনারা ইতোমধ্যে তুলেছেন। বলছেন, এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। কেন? শাপলা প্রতীক না দিলেই কি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা যায়? জাতীয় প্রতীকের মার্কা ছাড়া বাংলাদেশে কি আর কোনো মার্কা ছিল না? এ প্রশ্ন তো আমরাও তুলতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে ধানের শীষও তো জাতীয় প্রতীকে আছে। কিন্তু ধানের শীষের মার্কা নির্বাচন কমিশনের তফশিলে আছে। ১৯৭৮ সালের আগে সেই মার্কা সেখানে বিদ্যমান ছিল। এই মার্কা নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ প্রশ্ন তোলেনি। তাই রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানকালে ইতিহাস চর্চা করে বক্তব্য রাখা উচিত।’
ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির সুযোগ পেলে পতিত ফ্যাসিবাদ আবার বিজয়ী হবে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে যাতে কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভিন্নমত থাকবে; কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় সবাই যাতে একই রাস্তায় এগিয়ে যেতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করছেন, (নির্বাচনের) প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে এখনো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো নির্দেশনা দেননি। আশা করব, জনগণকে আশ্বস্ত করবেন। শিগ্গিরই নির্বাচন কমিশনকে সেই নির্দেশনা দেবেন।’
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল, সদস্য সচিব সাজ্জাদুল মিরাজ প্রমুখ।
কর্মসূচিতে যোগ দিতে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং থানা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী দুপুরের পর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হন। সেখানে বিকাল ৩টায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে পৌনে ৫টার দিকে একটি মিছিল বের হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও মৎস্যভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে আধা ঘণ্টার মতো অবস্থান করেন নেতাকর্মীরা। এতে শাহবাগের আশপাশে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।