বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
জাতীয়

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সচিবালয় এলাকা রণক্ষেত্র

প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে মঙ্গলবার বিকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সচিবালয়ের ভেতরে এবং বাইরে আব্দুল গনি রোড এলাকা দৃশ্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে।

তখন শিক্ষার্থীদের নিবৃত করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেদম লাঠিপেটা করে। টিয়ারশেল ছুড়ে সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের করে দেয়। এ সময় পুলিশ, শিক্ষার্থীসহ শতাধিক আহত হন। আহতদের মধ্যে ৯১ জন শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় সেদিনই গতকালের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা আসে সোমবার দিনগত রাত ৩টার দিকে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী এ খবর জানতে পারেননি। গতকাল স্ব স্ব কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার খবর জানতে পারেন তারা।


তথ্য উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেসবুকে জানান। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে অনেক পরে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে। এরপর ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। সে মোতাবেক কয়েকশ শিক্ষার্থী গতকাল বেলা ১টার দিকে বকশিবাজারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান ও বিক্ষোভ করার পর বেলা দেড়টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন। এ সময় নিরাপত্তার কারণে আব্দুল গনি রোড এলাকার দিকে থাকা সচিবালয়ের সব গেট বন্ধ করে দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।


ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরও কিছু শিক্ষার্থী বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন।


সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করেনি। রাত ৩টায় পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা আসে। যেটা শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো জানতে পারেনি। যে কারণে অনেকেই সকালে পরীক্ষা দিতে বের হয়। এটা স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা। এ কারণে আমরা শিক্ষা সচিব ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি।


শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপরও শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশের সহায়তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তখন সচিবালয়ের ভেতরে বাইরে টানটান উত্তেজনা চলছিল। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিকাল ৪টার দিকে বিপুল সংখ্যক্ষ শিক্ষার্থী তিন নম্বর গেট ভেঙে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের এ সময় সচিবালয়ের ভেতরে রাখা গাড়ি ভাঙচুর করতে দেখা যায়। এ ছাড়া তারা একজন পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটার মুখে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে জিরো পয়েন্টের দিকে জড়ো হয়। এ সময় সংঘাত সচিবালয়ের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায়ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয় পুলিশের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় ওই এলাকায় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়। এতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আশপাশ এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুলিস্তান, পল্টনসহ আশপাশ এলাকায় প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয়।


সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে সচিবালয় এলাকা স্বাভাবিক হয়।


এদিকে সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে সংঘর্ষের ঘটনায় ৯১ জন শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসার জন্য আনা হয়। এ ছাড়া আহত একজন সাংবাদিককেও ঢামেকে আনা হয়। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, তাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।


শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর আমাদের সময়কে বলেন, সচিবালয়ের ঘটনায় তাদের সাত-আটজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে বলে জানান ওসি।

এই সম্পর্কিত আরো