আবির আর রং উৎসবের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রা বা দোল পূর্ণিমা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এদিন মেতেছিলেন রং খেলায়। পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের আবির মাখিয়ে তারা উদ্যাপন করেন হোলি উৎসব।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) রং উৎসবের মধ্য দিয়ে এ হোলি উৎসব উদ্যাপন করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে ভক্তরা একই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার কাছে ন্যায়ের বিজয় ও অন্যায়ের বিনাশ প্রার্থনা করেছেন। আয়োজনে ছিল পূজা, হোমযজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণ ও কীর্তন ছাড়াও নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানও।
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির নিয়ে রাধিকা ও অন্য গোপীদের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল উৎসবের উৎপত্তি হয়। আর এই রং উৎসবই দোলযাত্রা। দোল পূর্ণিমায় চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম হয়েছিল, তাই এ উৎসবকে গৌর পূর্ণিমাও বলা হয়।
দোল খেলায় আবির কেন ব্যবহার হয়, এমন প্রশ্নে একজন পুরোহিত বলেন, দোল উৎসবের দিন ভগবানের চরণে আবির রাখা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, এর মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের জীবন থেকে রোগ-জরা দূর হয়ে জীবন রঙিন হয়ে উঠবে।
দোলযাত্রাকে ঘিরে শুক্রবার সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশের সূচনা ঘটে সারাদেশে। সকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পায়ে রং মেখে সেই রং শরীরে লাগিয়ে শুরু হয় উৎসবের সূচনা। পুরান ঢাকায় আবির খেলায় মেতে ওঠেন সব বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও পথচারীরা। সেখানকার শাঁখারিবাজার ও তাঁতীবাজারসহ বেশ কিছু এলাকার মন্দির, মঠ, রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি সবখানে মানুষ রঙের উৎসবে যোগ দেন।
একে অপরকে নানা রঙে রাঙিয়ে তারা অংশ নেন এই আনন্দযাত্রায়। আর আবির খেলাকে কেন্দ্র করে রং, পূজার মোমবাতি, আগরবাতি, প্রসাদ ও ফুলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বিকিকিনি হয়েছে। রাজধানীর অন্য সব মন্দির ও মাঠেও ছিল অনুরূপ আয়োজন। এসব মন্দিরে সকাল থেকেই নানা রঙের অর্ঘ্য নিয়ে নানা বয়সী ভক্তদের আসতে দেখা যায়।
বরাবরের মতো এ বছরও দোল উৎসবের আয়োজন হয় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে সেখানে সকালে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
ভজন কীর্তন, হোমযজ্ঞ ও আবির খেলাসহ ছিল অন্য আয়োজন। মন্দিরে ধর্মমত নির্বিশেষে সবার মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। পূজা শেষে দুপুরে প্রসাদ বিতরণ করা হয় ভক্তদের মাঝে। দোল উৎসবের আয়োজন ছিল শ্রী শ্রী রমনা কালী মন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমেও।