বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, সেই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে জনগণের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে লন্ডন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। বিকেল পাঁচটায় বক্তব্য শুরু করেন তারেক রহমান। প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় থেকেই তাদেরকে আমরা সমর্থন দিয়ে এসেছি। কারণ, আমরা চেয়েছি এই সরকার একটি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের হারিয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু লক্ষ্য করছি, সরকারের বিভিন্নজন জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন।’
বিগত স্বৈরাচারি সরকার দেশের প্রত্যেকটি সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরিয়ে আনতে হলে দেশে স্থিতিশীলতা আনা প্রয়োজন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু লোকের বক্তব্যে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে৷ স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা এখনো এই সরকারকে সাহায্য করবো। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষ যে নিরপেক্ষতা আশা করে, তারা যে সেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু মতপার্থক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ ও গণতান্ত্রিক দলগুলো। তাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ যত বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকব, তত বেশি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পনাকারীদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যাবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন বিলম্বিত হলে কারা সুবিধাপ্রাপ্ত হবে এটা দেখার বিষয়। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস৷ বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা অব্যহত রাখা যায়, তবে বাংলাদেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারবো। দেশে যদি ভোটের অধিকার নিশ্চিত থাকে, তাহলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে।’
তিনি বলেন, ’৪৫-৪৬ বছর ধরে ছয়টি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, গায়েবী ও মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে বিএনপি আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ কোনো নির্বাচনে বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল, কোনো নির্বাচনে বিএনপি বিরোধীদলীয় সরকার গঠন করেছে। বিএনপি আজ জনগণের রাজনৈতিক দল হয়েছে। তবে আরও বেশি কীভাবে জনগণের প্রত্যাশা লাভ করা যায়, সেই চেষ্টা আগামীতে আমাদের থাকবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি জনগণের কথা বলে। একটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো কীভাবে জনগণকে নিজের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখবে। পরিকল্পনা থাকে, কীভাবে সরকার গঠন করবে। এর একমাত্র উপায় হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণের কাছে যাওয়া। আমরা যেহেতু জনগণের শাসনে বিশ্বাস করি, ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, তাই আমরা ভোট চাইবো, নির্বাচন চাইবো- এটিই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টিই অনেকে নিতে পারেন না।’
মহানগর বিএনপির নবগঠিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবু টিপুকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘তোমাদের মূল ও অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে কুমিল্লা মহানগরীর সাধারণ মানুষের আস্থা দলের উপর আনতে কাজ করতে হবে৷ এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল সঠিক নেতৃত্ব বের করে আনা। কুমিল্লা মহানগরীর প্রতিটি মানুষের কাছে আমাদের দলের আদর্শ ও নীতি পৌঁছে দিতে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কাউন্সিলের কাছে অনুরোধ করবো, শুধু কুমিল্লা মহানগরী নয়, সমগ্র বাংলাদেশে যে দাবি আদায়ের জন্য আমাদের শত শত, হাজার হাজার সহকর্মী গুম, খুন, হত্যা ও গায়েবী মামলার শিকার হয়েছেন, সেই দাবি আমাদেরকে আদায় করতে হবে। এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
তারেক রহমান বলেন, ‘ভোটের অধিকার নিশ্চিত করলেই হবে না, যে ভোটের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেটা অধিকারও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে৷’
সর্বশেষ সম্মেলনে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদেরকে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। অন্যান্য দলও একই কাজ করবে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবেন, কাকে দায়িত্ব দেবেন আগামীর দেশ পরিচালনা করার। এখন হচ্ছে দেশ গড়ার পালা। দেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গড়ে তুলতে আমাদের চেষ্টা অব্যহত থাকতে হবে। এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
এর আগে বেলা ৩টার দিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ভিপি নজরুল। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু।
এসময় কুমিল্লা নগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারি আবুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন-উর-রশীদ ইয়াছিন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া ।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সাবেরা আলাউদ্দিন, সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিরুজ্জামান আমির, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ভিপি জসিম উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ভিপি আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব হাজী জসিম উদ্দিন প্রমুখ।