বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
জাতীয়

দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ও প্যাকেটে ৭৫ শতাংশ জুড়ে সতর্কবার্তার বিধান

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দেশে ই-সিগারেট ও উত্তপ্ত তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। 

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন এই অধ্যাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে বিদ্যমান ৫০ শতাংশ সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার পরিবর্তে এখন থেকে ৭৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

এ ছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় নতুন করে ‘নিকোটিন পাউচ’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং ইন্টারনেটসহ যেকোনো প্রচারমাধ্যমে তামাকের বিজ্ঞাপন ও বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে প্রকাশিত এক তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এই বিশাল মৃত্যুঝুঁকি এবং অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বিদ্যমান ২০০৫ সালের আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল। 


বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভেপিং ও ই-সিগারেটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সংশোধনী প্রস্তাবটি দীর্ঘ পর্যালোচনার পর সরকার অনুমোদন করল। বর্তমানে এই অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত জারির লক্ষ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

নতুন এই অধ্যাদেশে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনের সংজ্ঞাকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে এবং সেখানে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগে বিভিন্ন স্থানে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) রাখার সুযোগ থাকলেও এখন থেকে তা সরকারের কঠোর নির্দেশনার শর্তাধীন করা হয়েছে। 

তামাক কোম্পানির প্রচার ও প্রসারের পথ বন্ধ করতে খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকের প্যাকেট সাজিয়ে রাখা বা প্রদর্শন করার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে এই পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসলেও তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাজস্ব হারানোর অজুহাত দেখিয়ে এর বিরোধিতা করে আসছিল।

অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তামাক খাত থেকে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে থাকে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংগৃহীত ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্বের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ৪১১ কোটি টাকাই এসেছে তামাক খাত থেকে। 

রাজস্বের এই বিশাল অংকের কথা বিবেচনা করে আইন সংশোধনে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা গেলেও শেষ পর্যন্ত জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই কঠোর অধ্যাদেশটি পাস করা হলো। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর এই আইনটি পর্যালোচনার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার কার্যক্রম শেষে এক বছরেরও বেশি সময় পর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে।

এই সম্পর্কিত আরো