ইসলামে বিয়ে শুধু একটি সামাজিক বন্ধন নয়; এটি পবিত্রতা, দায়িত্ব ও আত্মসংযমের এক অনন্য মাধ্যম। মানুষের স্বভাব, সামর্থ্য ও পরিস্থিতি ভেদে বিয়ের বিধান কখনো সুন্নত, কখনো ফরজ, আবার কখনো মাকরুহ কিংবা হারামও হতে পারে। ইসলাম এখানে কঠোরতা নয়, বরং বাস্তবতা ও কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়েছে।
যদি কোনো ব্যক্তি শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম হয়, কিন্তু বিয়ে না করলে গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে তার জন্য বিয়ে করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
النِّكَاحُ مِنْ سُنَّتِي، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي، وَتَزَوَّجُوا فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ.
‘বিয়ে আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে করো, আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে কিয়ামতের দিন গর্ব করব।’ (ইবনে মাজাহ ২৩৮৩)
বিয়ে কখন ফরজ হয়?
যদি কোনো ব্যক্তি বিয়ে করতে সক্ষম হয় এবং নিশ্চিত বা প্রবল আশঙ্কা করে যে বিয়ে না করলে সে হারাম দৃষ্টি, অবৈধ সম্পর্ক বা ব্যভিচারের মতো গুনাহে জড়িয়ে পড়বে— তাহলে তার জন্য বিয়ে করা ফরজ।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন— ‘যে ব্যক্তি অবিবাহিত থাকলে গুনাহে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং তা বিয়ে ছাড়া অন্য কোনোভাবে দূর করা সম্ভব নয়— তার ওপর বিয়ে করা ফরজ; এ বিষয়ে কোনো মতভেদ নেই।‘
যাদের বিয়ের সামর্থ্য নেই, ইসলাম তাদের সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন—
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغْنِيَهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ
অর্থ: ‘যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে—যতক্ষণ না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করেন।’ (সুরা নূর: আয়াত ৩৩)
এছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) সামর্থ্যহীনদের জন্য রোজাকে উত্তম বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে—
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে; কারণ এটি দৃষ্টিকে অবনত রাখার এবং পবিত্রতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর। আর যে তা করতে পারে না, সে যেন রোজা রাখে, কারণ এটি তার জন্য ঢালস্বরূপ।’ (বুখারি ৫০৬৬, মুসলিম ১৪০০)
বিয়ে কখন মাকরুহ বা হারাম?
> যদি বিয়ে করলে স্ত্রীর হক আদায় করতে না পারার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে বিয়ে করা মাকরুহ।
> যদি নিশ্চিত হয় যে বিয়ের পর ফরজ দায়িত্ব পালন অসম্ভব হবে বা জুলুম হবে তবে বিয়ে করা হারাম। যেমন— চরম যৌন বা শারীরিক অক্ষমতা বা মানসিকভাবে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ অযোগ্যতা।
ইসলামে বিয়ে কোনো একমাত্রিক বিধান নয়; এটি মানুষের অবস্থা অনুযায়ী রহমত, দায়িত্ব কিংবা সতর্কবার্তা। তাই আবেগ নয়, বরং তাকওয়া, সচেতনতা ও আত্মসমালোচনার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়াই ইসলামের শিক্ষা। আল্লাহ যেন আমাদের প্রত্যেককে তার বিধানের গভীরতা বুঝে আমল করার তাওফিক দান করেন। আমিন।