আবারও নতুন করে বাজ পড়তে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে! ইসরাইল-ইরান উত্তেজনার মধ্যেই একের পর এক জ্বালানি, রসদবাহী ও নজরদারি বিমান ওই অঞ্চলে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে পূর্ব ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করেছে ৫২টি মার্কিন যুদ্ধবিমান। যার অনেকগুলোই পাড়ি দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও গ্রিসের চ্যানেল হয়ে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই সমরসজ্জায় শ্বাসরুদ্ধ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। স্কাই নিউজ।
ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘনীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে একের পর এক সামরিক বিমান পাঠাতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য জানিয়েছে, গত চার দিনে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের আকাশপথে কমপক্ষে ৫২টি মার্কিন সামরিক বিমান শনাক্ত হয়েছে। যেগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটির দিকেই যাচ্ছে। এই তৎপরতা এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইরানে হামলা চালানোর সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছেন।
বিশ্লেষণ বলছে, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ওই ৫২ বিমানের মধ্যে অন্তত ২৫টি গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের চানিয়া বিমানবন্দর হয়ে গেছে, যা জুনের প্রথমার্ধের তুলনায় আটগুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের ব্যাপক সামরিকীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সংকেত হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ওপরে দেখা ৫২টি বিমানের মধ্যে ৩২টি বিমান সেনা ও রসদ পরিবহণ, ১৮টি বিমান আকাশপথে জ্বালানি সরবরাহ এবং ২টি বিমান নজরদারি ও গোয়েন্দা কাজে ব্যবহৃত হয়।
এই চলাচলে মার্কিন যুদ্ধবিমান যেমন এফ-২২ বা এফ-৩৫-এর উপস্থিতির তথ্য ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ে প্রকাশ না পেলেও, বুধবার একটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রেকর্ড থেকে জানা গেছে, এফ-২২ র্যাপ্টর যুদ্ধবিমান আটলান্টিক পাড়ি দিয়েছে। একই দিনে যুক্তরাজ্য থেকে ১২টি এফ-৩৫ ফাইটার জেট মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। যার ছবি স্কাই নিউজ সংগ্রহ করেছে।
বৃহস্পতিবার স্কাই নিউজের ক্যামেরায় দেখা গেছে, তিনটি সি-১৭এ গ্লোবমাস্টার-৩ ট্রান্সপোর্ট বিমান এবং একটি সি-১৩০ হারকিউলিস কার্গো বিমান গ্লাসগোর প্রেস্টউইক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা অনুসারে, এই বিমানের একটি জার্মানি থেকে যাত্রা করে প্রথমে জর্ডানে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে আবার যুক্তরাজ্যে আসে।
কেন এই প্রস্তুতি?
যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানে সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সামরিক উপস্থিতির এ উল্লম্ফন ইঙ্গিত দিচ্ছে, ওয়াশিংটন এখন যুদ্ধ-সম্ভাব্যতা মাথায় রেখেই কৌশল সাজাচ্ছে। এই প্রস্তুতি ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় এবং ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে মোকাবিলা করার সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।
স্কাই নিউজ বলেছে, এই সামরিক গতি-প্রকৃতি কেবল প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং তা প্রয়োজনে সরাসরি আক্রমণে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা প্রতিষ্ঠার দিকেই নির্দেশ করে। তবে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ইরানে হামলা চালাবেন কি না।
ইসরাইলের কেন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন?
ইরানের আকাশসীমায় ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণ থাকায় তারা বিস্তৃত বোমাবর্ষণ চালাতে পারছে। তবে তেহরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পেরে উঠবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরাইলের প্রধান লক্ষ্য ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনা।
এই স্থাপনার মূল অংশ প্রায় ৮০-১০০ মিটার গভীরে অবস্থিত। যেখানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘বাংকার বাস্টার বোমা’র মাধ্যমেই পৌঁছানো সম্ভব।